পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
প্রাচীন ভারতে নারী

মহাভারত বাধ্য হইয়াছেন (৪৬-১৫)। শান্তিপর্বের ১৪৪তম অধ্যায়টি আগাগোড়াই ভার্যা-প্রশংসা।

 রামায়ণেও দারাকে আত্মা বলা হইয়াছে (অযোধ্যা ৩৭-২৪)। অর্থাৎ, পত্নীকে পতি অপরজ্ঞানে হীনদৃষ্টিতে বা নীচভাবে দেখিতে পারিবেন না।

 মহাভারতের যুগে নারীদের অধিকারের বিরুদ্ধে মুখে কেহ-কেহ কিছু বলিলেও সামাজিক জীবনে নারীদের অনেক অধিকারই দেখা যায়। রাজকন্যাদের তখন প্রায়ই স্বয়ংবর প্রথায় বিবাহ হইত। সাবিত্রী দময়ন্তী কুন্তী দ্রৌপদী প্রভৃতি অনেকের বিবাহে কন্যারা নিজেরাই বর বরণ করিয়াছেন। এই স্বয়ংবর প্রথায় নারীর অধিকার কিরূপ ছিল তাহা জানিতে হইলে বনপর্বের ২৯২তম অধ্যায়ে সাবিত্রীর প্রতি তাঁহার পিতার প্রদত্ত উপদেশগুলি দেখা উচিত (৩২-৩৬ শ্লোক)। যম ও সাবিত্রীর মধ্যে যে কথাবার্তা তাহাও (বনপর্বের ২১৬তম অধ্যায়) পড়া উচিত।

 স্বয়ংবর প্রথাতেই বুঝা যায়, তখন যুবতীবিবাহই সমধিক চলিত ছিল। বালিকাবিবাহ যে ছিল না তাহা নহে, তবে যুবতীবিবাহই তখন বেশি প্রচলিত ছিল। তখনকার বৈদিক মন্ত্রাদিতেও ইহাই বুঝা যায়। মনু তো নারীদের বিষয়ে খুবই সাবধানে বিধান দিয়াছেন। তবু তিনি অপাত্রকে কন্যাদানের চেয়ে ঋতুমতী কন্যা যাবজ্জীবন ঘরে থাকাও ভালো বলিয়াছেন (৯.৮৯)। এখানে টীকাকার মেধাতিথি বলিয়াছেন, ঋতুর পূর্বে কন্যাকে দান করিবে না, যাবৎ গুণবান বর না মেলে—

প্রাগ্‌ঋতোঃ কন্যায়া ন দানম্···
যাবদ গুণবান্ বরো ন প্রাপ্তঃ

 যুবতীদের বিবাহে যে অনেকসময় জাতিভেদ প্রভৃতির অনুশাসন পালিত হইতে পারিত না, তাহা সহজেই বুঝা যায়। আমার ‘জাতিভেদ’ পুস্তকে এই বিষয়ে আমি বহু আলোচনা করিয়াছি। বৌদ্ধদের মধ্যে তো জাতিভেদের এত মানামানিই ছিল না। কোশলপতি পসেনদি দাসীকন্যা মল্লিকাকে বিবাহ করেন। বণিককন্যা দেবীর গর্ভেই অশোকের পুত্র মহিন্দ ও সংঘমিত্তার জন্ম। শিকারীদের রাজকন্যার সহিত সাধু উপদের বিবাহ হয়। সর্দার পুত্র শার্দূলকর্ণের সহিত ব্রাহ্মণকন্যার বিবাহ ঘটিয়াছিল।

 আবার মাঝে মাঝে আভিজাত্যগর্বিত রাজকুলে ভাইবোনেও যে বিবাহ