পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ ও অধিকার
১৭

হইয়াছিল। সভামধ্যে, বিশেষত রাজাদের সভায়, তাহার কথা মুখে আনিতে তোমার লজ্জা করে না?”

শিশুপালঃ...বাক্যং চেদমুবাচ হ। সভা ৪৫-১৭

মৎপূর্বাং রুক্মিণীং কৃষ্ণ সংসৎসু পরিকীর্তয়ন।
বিশেষতঃ পার্থিবেষু বৃড়াং ন কুরুষে কথম্। সভা ৪৫-১৮

 রুক্মিণীর বিবাহ শিশুপালের পক্ষে ক্ষোভের বিষয় হইলেও মুনি-ঋষি-সাধু-সজ্জন সকলেই এই বিবাহ সম্মানের সহিত স্বীকার করিয়াছেন। নহিলে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ধর্মসংস্থাপক হইয়া তো আর ধর্মনাশ করিতে পারিতেন না। কাজেই গালব-মুনির কথায় দেখা যায় যেমন স্বাহাতে অগ্নি ও লক্ষ্মীতে নারায়ণ প্রেমে যুক্ত (উদ্যোগ ১১৭-১০), সাবিত্রীতে যেমন সত্যবান (উদ্যোগ ১১৭-১২), দময়ন্তীতে যেমন নল (উদ্যোগ ১১৭-১৫), বৈদেহীতে যেমন রাম, তেমনই রুক্মিণীতে জনার্দন প্রেমে যুক্ত হইলেন।

বৈদেহ্যাঞ্চ যথা রামো রুক্মিণ্যাঞ্চ জনার্দনঃ। উদ্যোগ ১৭

 ইহাতে মনে হয় তখনকার দিনে শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে এই বিবাহ কিছুমাত্র অগৌরবের বস্তু হয় নাই। তাই মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণগৌরব-বর্ণনায় দেখি— যিনি (শ্রীকৃষ্ণ) একা স্বীয় বলে সমস্ত ভোজরাজগণকে পরাস্ত করিয়া যশস্বিনী দীপ্যমানা রুক্মিণীকে ভার্যারূপে জয় করিয়া আনিলেন এবং এই রুক্মিণীতে মহাত্মা রৌক্মিণেয় অর্থাৎ প্রদ্যুম্নকে জন্ম দিলেন—

যো রুক্মিণীমেকরথেন ভোজানুৎসাদ্য রাজ্ঞঃ সমরে প্রসহ্য।
উবাহ ভার্যাং যশসা জ্বলন্তীং যস্যাং জজ্ঞে রৌষ্মিণেয়ো মহাত্মা। উদ্যোগ ৪৮-৭৪

 হরিবংশে দেখা যায়, রুক্মিণীর গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের প্রদ্যুম্ন ছাড়া আরও অনেক সন্ততি জন্মলাভ করেন। মূল উদ্ধৃত করিয়াই তাহা দেখান যাউক—

প্রদ্যুম্নং প্রথমং জজ্ঞে শশ্বরান্তকরঃ সুতঃ।
দ্বিতীয় চারুদেষ্ণশ্চ বৃষ্ণিসিংহো মহারথঃ।
চারুভদ্রশ্চারুগর্ভঃ সুদংষ্ট্রো দ্রুম এব চ॥
সুষেণশ্চারুগুপ্তশ্চ চারুবিন্দশ্চ বীর্যবান্।
চারুবাহুঃ কনীয়াংশ্চ কন্যা চারুমতী তথা। ১৬০, ৫-৬

 রুক্মিণী ভীষ্মকাত্মজা নহেন এরূপ তর্ক করা বৃথা অথচ এইরূপ যুক্তিকে আশ্রয় করিয়াই মীমাংসাদর্শনের তর্কে বলা হইয়াছে, সুভদ্রা ছিলেন অর্জুন-