পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
প্রাচীন ভারতে নারী

 সোম গন্ধর্ব বহ্নির পরে মানব স্ত্রীকে ভোগ করেন, ইহাকে কেহ দোষ দিতে পারে না। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যও বলিলেন, সোম কন্যাকে দিলেন শৌচ, গন্ধর্বেরা দিলেন শুভা বাণী, পাবক দিলেন সর্বমেধ্যতা, তাই তো নারীগণ সর্বদাই পবিত্র—

সোমঃ শৌচং দদৌ তাসাং গন্ধর্বাশ্চ শুভাং গিরম্।
পাবকঃ সর্বমেধ্যত্বং মেধ্যা বৈ যোষিতোহ্যতঃ। যাজ্ঞবল্ক্য-সংহিতা ১.৭১

 কাজেই এইসব মন্ত্র দেখিয়া বুঝা যায় কন্যাদের বহু-পতিত্ব ইহাতে বুঝায় না। তবে কন্যাদের বহু-পতিত্ব যে একেবারে ছিল না তাহা নহে, সেকথা পরে হইবে।

 এই বিচারে দেখা গেল, তখন যৌবনেই বিবাহ হইত।

 আপস্তম্ব-ধর্মসূত্রে (২. ১. ১৭) দেখা যায়, ঋতুমতী না হইলে স্ত্রীর সঙ্গে বাস করিবে না। গৌতম ধর্মসূত্রেও (৫.১) সেই উপদেশ। প্রাচীন কালে কথার কথাই ছিল—

প্রাগ্‌রজোদর্শনাৎ পত্নীং নেয়াৎ।

অর্থাৎ, পত্নীকে রজোদর্শনের পূর্বে গমন করিবে না। গোভিলীয়-গৃহ্যসূত্রাদি গ্রন্থে এই বিষয়ে যথেষ্ট উপদেশ আছে। অথচ বিবাহের পরই গর্ভাধান করিবার জন্য অতন্তঃ কয়টি দিন প্রতীক্ষা করিতে হইবে তাহারও বিধান সেইসব গৃহ্যসূত্রে আছে। তিনরাত্রি উভয়ে ব্রহ্মচর্য পালন করিয়া গর্ভাধান করিবে, ইহাই গোভিলীয়-গৃহ্যসূত্রের ব্যবস্থা।

 এই ব্যবস্থার মূল ছিল বীর ও তপস্যাশীল পুত্রলাভের বাসনা। অবশ্য এই বিষয়ে এখন Eugenics শাস্ত্রবিদ্‌দের কি মত তাহা বলিতে পারি না, কিন্তু আশ্বলায়ন বলেন—

অত ঊর্ধ্বমক্ষারলবণাশিনাবধঃশায়িনৌ ব্রহ্মচারিণৌ স্যাতাম্। ত্রিরাত্রং
দ্বাদশরাত্রং সংবৎসরংবৈক ঋষির্জায়ত ইতি। অশ্বলায়ন-গৃহা ১.৬.১১

অর্থাৎ, বিবাহের পর তখনই গর্ভাধান না করিয়া অন্তত কয়েকদিন উভয়ে ব্রহ্মচর্য পালন করিবে। ভোজনে ক্ষার-লবণ ত্যাগ করিয়া খাট-পালঙ্কে না শুইয়া সংযত ব্রহ্মচর্যব্রতধারী হইয়া স্বামী স্ত্রী উভয়ে থাকিবে। কাহারও কাহারও মতে তিনরাত্রি থাকিলেই চলে, কেহ বলেন দ্বাদশরাত্রি, কেহ বলেন পুরা এক বৎসর এই ব্রত পালণীয়। ইহার উদ্দেশ্য হইল সন্তান যেন একজন ঋষি হয়।