তবে তিনি ‘মেধ্যা' না বলিয়া স্ত্রীদিগকে 'নিষ্কল্মষা' অর্থাৎ নিষ্পাপা বলিয়াছেন।[১]
মহাভারতে বিবাহ (৪৪ অধ্যায়), স্ত্রীধন, যৌতক (৪৫ অধ্যায়), স্ত্রীপ্রশংসা (৪৬ অধ্যায়), রিক্থ-ভাগ (৪৭ অধ্যায়), বর্ণসংকর কথন (৪৮ অধ্যায়), দানধর্ম (৪৯ অধ্যায়) প্রভৃতির আলোচনা অনুশাসন পর্বে আছে (৪৪-৪৯ অধ্যায়)। তবে তাহা প্রায় মনুর মতেরই সঙ্গে মিলে।
পূর্বেই বলা হইয়াছে, প্রাচীন কালে নারী আপন পতি আপনিই বরণ করিতেন। বৈদিক সাহিত্য আলোচনা করিলে এবং তখনকার বিবাহঅনুষ্ঠানগুলির রীতিনীতি দেখিলে তাহাই বুঝা যায়। ক্রমে জাতিভেদ প্রতিষ্ঠিত হইল। তখন ছেলেমেয়েদের স্বাধীন মতামত দেওয়া আর চলিল না। কারণ বিবাহের দুইটি দেবতা। প্রাচীন দেবতা হইলেন প্রজাপতি; তিনি দেখিয়া শুনিয়া ধীরে সুস্থে শাস্ত্রবিধি সমাজবিধি সব বাঁচাইয়া অগ্রসর হন। আর বিবাহের নবীন দেবতা হইলেন, ‘মন্মথো দুর্নিবারঃ’। তিনি সব ভাঙিয়া চুরিয়া একাকার করিয়া অগ্রসর হন। কালিদাস-কৃত শকুন্তলার চরিতেও এই নবীন দেবতার কিছু প্রভাব দেখা যায়। তাই যখন দেখা গেল ‘ধূমাকুলিতদৃষ্টি হইলেও যজমানের আহুতি অগ্নিতেই পড়িয়াছে’, অর্থাৎ দুষ্মন্ত-শকুন্তলার প্রেম জাতিপংক্তিবিরোধী হয় নাই, তখন গুরুজনেরা হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলেন।
পরবর্তী যুগে কন্যাদের স্বামী-নির্বাচনের অধিকার গুরুজনের হাতেই গিয়া পড়িল। কিন্তু গুরুরা যদি কেহ সময়মত কন্যাদের বিবাহে উদ্যোগ না করেন, তবে সেই স্থলে কন্যা নিজেই পতি সংগ্রহ করিতে পারে। বৌধায়নস্মৃতি (৪. ১. ১৫) বলেন, ঋতুমতী হইয়া তিন বৎসর কন্যা পিতৃশাসনের প্রতীক্ষা করিবে; তারপর চতুর্থ বর্ষে নিজেই উপযুক্ত পতি গ্রহণ করিবে—
ত্রীণি বর্ষাণ্যুতুমতী কাংক্ষেত পিতৃশাসনম্।
ততশ্চতুর্থে বর্ষে তু বিন্দেত সদৃশং পতিম্॥
বোধায়ন-ধর্মসূত্র-বিবরণকার গোবিন্দ স্বামী ইহাকে স্বয়ম্বর-অধিকার বলিতেও সংকুচিত হন নাই—
এবং স্বয়ম্বরং পরিসমাপ্য ইত্যাদি। ৪. ১, ১৭ বিবরণ
- ↑ আনন্দাশ্রম সংস্করণ ২,২, ৬৪