পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
প্রাচীন ভারতে নারী

মনুসংহিতায় আছে। কতক ক্লীবত্ব জন্মগত, কতক ইন্দ্রিয়হীনতাবশত, কতক ক্লৈব্য কালগত, কতক ঈর্ষ্যাদিহেতুক, কতক বা সাময়িকভাবে অপগত হয়। কতক ক্লৈব্যে কিছু অদ্ভুতত্ব (abnormality) থাকে, কতক ক্লৈব্য যথাস্থানে নিষেক হয় না অথবা নিষেকই হয় না, হইলেও সন্তান হয় না। কাহারও পৌরুষ বা নারীর কাছে সংকুচিত, কাহারও বা স্বভার্যায় পৌরুষ হয় না অথচ অন্যত্র হয় (ঐ ১২. ১২. ১৩)। ভাষ্যকার ভবস্বামী বলেন, এইসব ক্লীবত্বের কথা না জানাইয়া যে বিবাহ করে, অথবা বরের এই দোষ জানিয়াও যে কন্যা দেয়, সে রাজদণ্ডে দণ্ডনীয় (ঐ ১২. ১৪. ভাষ্য), কারণ বিবাহসংস্কার জীবনব্যাপী ব্রত ও তাহা সামাজিক দায়িত্ব। তাই এই অপরাধে বরপক্ষ ও কন্যাপক্ষ উভয়কেই সমাজ ও রাজা শাসন করিতে বাধ্য। তবু যদি কোনো কারণে এইরূপ বিবাহ ঘটিয়া যায়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক মাস, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্বৎসর প্রতীক্ষা করিবে (ঐ ১২. ১৪)। যদি তাহার পরও বরের এইসব প্রকারের কোনো না কোনো ক্লৈব্য আছে ইহা বুঝা যায় তবে তাহার পরেও সেই বরকে ত্যাগ করিবে, এবং তাহা অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না (ভবস্বামী, তত্র)। কোনো কোনো ক্লৈব্যে যে মানসিক (psychological) অদ্ভুতত্ব বা বীজদোষ থাকে সেইরূপ চারি প্রকার ক্লৈব্য-ক্ষেত্রে পতিসমাগম হইয়া থাকিলেও পতিতবৎ পতিকে ত্যাগ করিতে হইবে (নারদীয় মনু, ১২. ১৫)।

 সমাগমকালেই এইসব ক্লৈব্য অনেক সময় ধরা পড়ে। তাই সমাগতা হইলেও এইরূপ ক্ষেত্রে কন্যাকে যোগ্য পতির সহিত সংগত করিবে। তাহার অর্থ এইরূপ ক্ষেত্রে পত্যন্তর গ্রহণই বিহিত। বীজে জননশক্তি না থাকিলে, এক বৎসর প্রতীক্ষা করিয়া পত্যন্তর গ্রহণ করিবে (ঐ ১৬)। নারীতে যদি পৌরুষ সংকুচিত বা নিজ স্ত্রীতে যদি পৌরুষ না হয়, তবে সেই নারী পত্যন্তর গ্রহণ করিবে (ঐ ১৭-১৮)। কারণ অপত্যার্থ ই স্ত্রী সৃষ্ট, সেই ক্ষেত্র বীজবানকেই দিবে; যে বীজহীন সে ক্ষেত্র পাইতে অধিকারী নহে (ঐ ১৯)। এমন স্থলে সেই কন্যাকে পিতাই পুনরায় অন্য বরে দান করিবেন, বা তদভাবে অন্য কোনো গুরুজন দান করিবেন। অথবা হয়তো মাতা বা স্বজাতি কেহ দান করিবেন। ইহাও যদি সম্ভব না হয় তবে রাজার আজ্ঞায় কন্যা স্বয়ংই পতি-বরণ করিবে (ঐ ২০-২২)। অর্থাৎ এইরূপ ক্ষেত্রে পিতা-মাতা নাই বলিয়া পত্যন্তরগ্রহণ ফেলিয়া রাখিলে চলিবে না, কারণ তাহাতে সমাজেরই ক্ষতি।