পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবাহবন্ধন-ছেদনে শাস্ত্রবিধি
৭৩

কাজেই এমন স্থলে সমস্ত সমাজের হইয়া রাজাই সেই কন্যাকে অনুরূপ বরে দিবেন। সবর্ণ, কুল-রূপ-বয়ঃ-শ্রুতাদিতে যে অনুরূপ, সেই বরের সহিত কন্যা বিবাহ-ধর্মাচরণ করিবে এবং তাহার দ্বারা পুত্রাদি উৎপন্ন করাইবে—

সবর্ণমনুরূপং চ কুলরূপবয়ঃশ্রুতৈঃ।
সহধর্মং চরেৎ তেন পুত্রাংশ্চোৎপাদয়েৎ ততঃ। ঐ ১২.২৩

 তবু বীজহীনকে ক্ষেত্র ফেলিয়া দিয়া রাখা চলিবে না, কারণ তাহা সামাজিক ধর্মের বিরোধী। সমাজ চাহে সম্প্রসারণ। এইসব অপরাধে সমাজ ক্রমে সংকুচিত হয়, কাজেই এইরকমের অপরাধ সর্বভাবে দূর করিতে হইবে। যে পুরুষ প্রজাসৃষ্টিতে অক্ষম, সে সমাজের পক্ষে বৃথা ভার মাত্র। তাহার বিবাহকে বিবাহই ধরা হইবে না। এইরূপ বিবাহে সমাজের দুর্গতি দিন দিন বাড়িয়া চলে, কাজেই এইরূপ বিবাহ হইয়া থাকিলেও তাহা অসিদ্ধ।

 কেহ যদি বিবাহ করিয়াই কন্যাকে ফেলিয়া দেশান্তরে চলিয়া যায় তখনও তো বীজ থাকিতেও ক্ষেত্রে বীজের অভাব ঘটে। তাই নারদ (১২. ২৪) বলিতেছেন, বরণ করিয়াই যদি কেহ দেশান্তরে যায় তবে তিনটি ঋতুকাল প্রতীক্ষা করিয়া কন্যা অন্য বরকে বরণ করিবে; ঋতু যাহাতে ব্যর্থ না হয় তাই প্রত্যেক ঋতুর কথা কন্যা বান্ধবদের বলিবেন, তাঁহারা যদি তিনটি ব্যর্থ ঋতুর পরেও সেই কন্যাকে অন্য বরের কাছে না দেন তবে তাঁহারাই পাপী হইবেন (ঐ ২৫)।

 কন্যার জন্য যদি শুল্ক গ্রহণ করার পর আরও ভালো বর আসে তবে ভদ্রভাবে পূর্ব সম্বন্ধ ভাঙিয়া দিলেও দোষ হইবে না (ঐ ৩০)। অক্ষতযোনি (ঐ ৪৬), ক্ষতযোনি (ঐ ৪৭) উভয় প্রকারই পুনর্ভূ হইতে পারে। দেবর না থাকিলে অন্য কোনো অসবর্ণ বা সবর্ণের সঙ্গে যদি কন্যার পুনরায় বিবাহ দেওয়া হয় তবে তাহাও পুনর্ভূ (ঐ ৪৮)। পুত্রকামনায় গুরুজনের আজ্ঞায় দেবরকে গ্রহণ করিলে ব্যভিচার দোষ ঘটে না (ঐ ৮০)।

 প্রব্রজিত, নষ্ট, ক্লীব, পতিত ও মৃত এই পঞ্চ আপদে নারীদের পত্যন্তর গ্রহণ বিহিত হয় (ঐ ৯৯) ইহা ইঁহারও অভিমত।

 পতি প্রোষিত হইলে ব্রাহ্মণ স্ত্রী পতির জন্য আট বৎসর প্রতীক্ষা করিবে। সন্তান না হইয়া থাকিলে চারি বৎসর প্রতীক্ষা করিয়া অন্য পতি সমাশ্রয় করিবে (ঐ ১০০); ক্ষত্রিয়া ছয় বৎসর প্রতীক্ষা করিবে, অপ্রসূতা হইলে তিন বৎসর; বৈশ্যা চারি বৎসর, অপ্রসূতা হইলে দুই বৎসর প্রতীক্ষা করিবে (ঐ ১০১);