পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিবাহবন্ধন-ছেদনে রাজবিধি

 ধর্মশাস্ত্র লইয়াই এতদূর আলোচনা চলিল। এখন দেখা যাউক, প্রাচীন রাজ-ব্যবহারে বা আইনে কিরূপ ব্যবস্থা দেখা যায়। এইরূপ আইনের মধ্যে বোধ হয় কৌটিল্যকৃত অর্থশাস্ত্রই বেশ প্রাচীন এবং প্রামাণিক গ্রন্থ। কৌটিল্য নামের জন্য কেহ কেহ ইহা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সমকালীন, অর্থাৎ খৃস্টপূর্ব ৩২১-৩০০ অব্দের, মনে করিয়াছেন। কামন্দকীয়-নীতিসারে এই গ্রন্থ আখ্যাত। মহামহোপাধ্যায় শাম শাস্ত্রী মনে করেন, মনু, যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি স্মৃতির যে সংহিতা এখন প্রচলিত, অর্থশাস্ত্র তাহাদের বহু পূর্বে রচিত।[১] আচার্য Winternitz মনে করেন, এই অর্থশাস্ত্র খ্রীস্টীয় দ্বিতীয় শতকের রচনা। তবু তাহা বর্তমান বহু স্মৃতি গ্রন্থেরই পূর্ববর্তী কালের রচিত।

 গ্রন্থখানিতে সাংসারিক যুক্তি-বিচারের দিকেই ঝোঁক দেখা যায়। ধর্মশাস্ত্রে দেখা যায়, ধর্মের প্রমাণের দিকে ঝোঁক। গণপতি শাস্ত্রীর সম্পাদিত কৌটলীয়ের অর্থশাস্ত্র ‘বিদ্যাসমুদ্দেশে’ (১.২.১) সর্বপ্রথমে নাম করিয়াছেন আন্বীক্ষিকী বিদ্যার। আন্বীক্ষিকী বলিতে সাংখ্যযোগ ও লোকায়ত ধরিয়াছেন (পৃ ২৭)। এই বিদ্যা জগতের সর্বাপেক্ষা উপকারিকা (পৃ ২৮)। অথচ এই লোকায়ত মতকে অনেকে নাস্তিক বা হেতুশাস্ত্র বলিয়া খুবই নিন্দা করিয়াছেন। যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা (১. ৩০৮) বলেন, রাজাদের উন্নতি ও পতন হইল গ্রহাধীন, তাই গ্রহগণ পূজ্য। অর্থশাস্ত্র বলেন, যেসব লোক নক্ষত্রের উপরই অতিশয় নির্ভর করে তাহারা ছেলেমানুষ অর্থাৎ মূর্খ, কাজেই তাহারা অর্থ বা অভীষ্ট লাভ হইতে বঞ্চিত হয়। অর্থই হইল অর্থের নক্ষত্র, অর্থাৎ প্রাপ্তির হেতু; তারকাগুলা আর করিবে কি?

নক্ষত্রমতিপৃচ্ছন্তং বালমর্থোঽতিবর্ততে।
অর্থো হ্যর্থস্য নক্ষত্রং কিং করিষ্যন্তি তারকাঃ। অর্থশাস্ত্র-শামশাস্ত্রী, ৯. ৪. ১৪২

 ইহাতেও বুঝা যায়, গ্রীকদের নিকট হইতে প্রাপ্ত গ্রহের ফলাফল-গত


  1. Kautilya’s Arthasastra, Intro. pp. xvii-xviii; Arthasastra of Kautilya by Jolly, Intro. p. 46