পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন ভারতে নারী

হইবে, ইহাই ছিল রীতি। এই প্রসঙ্গে কৌটলীয় অর্থশাস্ত্রের ধর্মস্থীয় তৃতীয় অধ্যায়ে ঊনষষ্টিতম প্রকরণে ‘নগ্নে বিনগ্নে’ ইত্যাদি বচন দর্শনীয়।[১]

 অথর্ববেদে দেখা যায়, পূর্বকালে কন্যারাও ব্রহ্মচর্য পালন করিয়া পতিলাভ করিতেন—

ব্রহ্মচর্যেণ কন্যা যুবানং বিন্দতে পতিম্। অথর্ব ১১.৭.১৮

 এখানে ভাষ্য বলেন, ‘অকৃতবিবাহা স্ত্রী ব্রহ্মচর্যং চরতি’। শুক্ল যজুর্বেদও কন্যাদের শিক্ষা-দীক্ষা সমর্থন করেন। এমনকি স্মৃতির যুগেও এই প্রথার স্মৃতি মুছিয়া যায় নাই। দেবণ্ণ ভট্টের স্মৃতি-চন্দ্রিকায় বিবাহকালে নারীদের বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করিবার ব্যবস্থা দেখা যায়—

বিবাহস্তু সমন্ত্রকঃ। সংস্কারকাণ্ড, স্ত্রীসংস্কার

 মনুর মতে দেখা যায় যে, বিবাহই স্ত্রীলোকের উপনয়ন—

বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ। ২.৬৭

 ইহা উদ্ধৃত করিয়াও দেবণ্ণ ভট্ট হারীতের মত উদ্ধৃত করিয়াছেন। হারীত (২১, ২৩) বলেন, নারীদের মধ্যে একদল ব্রহ্মবাদিনী, অন্যেরা সদ্যোবধূ। ব্রহ্মবাদিনীরা উপনয়ন, অগ্নীন্ধন, বেদাধ্যয়ন ও স্বগৃহে ভিক্ষাচর্যা পালন করিবেন। সদ্যোবধূদের বিবাহকালে কথঞ্চিৎ উপনয়ন মাত্র করিয়া বিবাহ করিতে হইবে—

দ্বিবিধাস্ত্রিয়ো ব্রহ্মবাদিন্যস্‌সদ্যোবধ্বশ্চ। তত্র ব্রহ্মবাদিনীনাম্ উপনয়নম্ অগ্নীন্ধনং বেদাধ্যয়নং স্বগৃহে চ ভিক্ষাচর্যেতি। সদ্যোবধূনাং চোপস্থিতে বিবাহে কথংচিদ্ উপনয়নমাত্রং কৃত্বা বিবাহঃ কার্যঃ।—স্মৃতিচন্দ্রিকা, সংস্কার কাণ্ড, স্ত্রী সংস্কার

 এই বিষয়ে কল্পান্তরাভিপ্রায় অর্থাৎ অন্যান্য স্মৃতির সমর্থন দিতে গিয়া তিনি যম হইতে উদ্ধৃত করেন, পুরাকালে নারীদেরও মৌঞ্জীবন্ধন অর্থাৎ উপনয়ন সংস্কার হইত। তাঁহাদের পক্ষে বেদের অধ্যাপন ও সাবিত্রীবচন বিহিত ছিল। তাঁহাদিগকে পিতা পিতৃব্য বা ভ্রাতা পড়াইতেন, অন্যেরা নহে। স্বগৃহেই তাঁহারা ভৈক্ষচর্যা করিতেন। তবে তাঁহারা অজিন চীর জটাধারণ বর্জন করিয়া চলিতেন—


  1. গণপতি শাস্ত্রী, সংস্করণ ১৯২৪, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ ২০