পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবাহবন্ধন-ছেদনে রাজবিধি
৮১

(নিকটতম), ধার্মিক এবং ভরণে সক্ষম, অথবা যে কনিষ্ঠ ও ভার্যাহীন তাহাকেই বিবাহ করিবে। পতির এমন ভাই না থাকিলে সপিণ্ডকে বিবাহ করিবে বা স্বামীর কুলজাত আসন্নকে (সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে) বিবাহ করিবে। ইহাই হইল বিহিতক্রম—

 দীর্ঘপ্রবাসিনঃ প্রব্রজিতস্য প্রেতস্য বা ভার্যা সপ্ততীর্থান্যাকাংক্ষেত। সংবৎসরং প্রজাতা। ততঃ পতিসোদর্যং গচ্ছেৎ। বহুষু প্রত্যাসন্নং ধার্মিকং ভর্মসমর্থং কনিষ্ঠমভার্যং বা। তদভাবেপ্যসোদর্যং সপিণ্ডং কুলাং আসন্নম্। এতেষাং এষ এব ক্রমঃ।

 পতির এইসব দায়াদগণকে (আত্মীয়গণকে) লঙ্ঘন করিয়া যদি কোনো নারী বিবাহ করে তবে সে ক্রম ও বিধি লঙ্ঘন করে। এমন স্থলে বিবাহকারী বরকন্যা, বিবাহদাতা ও যাহারা তাহাতে সম্মতি দেয় তাহারা সকলেই অবৈধ স্ত্রীপুরুষ-মিলনের অপরাধে দণ্ডনীয়—

এতানুৎক্রম্য দায়াদান্ বেদনে জারকর্মণি।
জারস্ত্রী-দাতৃবেত্তারঃ সংপ্রাপ্তাঃ সংগ্রহাত্যয়ম্॥ গণপতি শাস্ত্রীর কৌটলীয় অর্থশাস্ত্র, II, ৬১অ, পৃ ৩০

 ঋগ্বেদে ও অথর্ববেদেও বিধবার পুনর্বিবাহের প্রথা দৃষ্ট হয়। অথর্বে ‘পুনর্ভূ’ বিবাহব্যবস্থা দৃষ্ট হয়। সেই দ্বিতীয় পতির সঙ্গে বিয়োগ না ঘটে সেজন্য অথর্বে ‘অজপঞ্চৌদন’দান ব্যবস্থাও দেখা যায়। বোধায়ন ধর্মসূত্রে (২. ২. ২৭) পতিত ও ক্লীবকে ত্যাগ করিয়া পত্যন্তর-বেদনের ব্যবস্থা আছে। বসিষ্ঠের ব্যবস্থাও দেখানো গেল। নারদীয় মনু প্রাচীন সংগ্রহ, তাহারও ব্যবস্থা দেখানো গেল। তার পর অর্থশাস্ত্রের সব ব্যবস্থাও দেখানো গেল। অর্থশাস্ত্রও ধর্মবিবাহকে একটা জীবনব্যাপী সংস্কার মনে করেন। তথাপি তীর্থোপরোধ অর্থাৎ ঋতুকালের উপেক্ষাকে ধর্মবধ মনে করা উচিত, ইহাই তাঁহার মূল কথা। তাই যেখানে যেখানে বিশেষ বিশেষ স্থলে পত্যন্তর গ্রহণ বিধেয় তাহা তিনি স্পষ্ট করিয়া বুঝাইয়া বলিয়াছেন।

 বিধি যাহাই থাকুক, নারীর স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হইল এক পতি লইয়া ঘর করা। বহুবিবাহ পুরুষ বা নারীর উভয়েরই হইতে পারে। পুরুষের বহুবিবাহকে ইংরেজিতে পলিগ্যামি বলে। নারীর বহুবিবাহকে পলিআণ্ড্রি বলে। পলিগ্যামি বহুদেশেই ছিল এখনও আছে, তবে এই বিষয়ের ব্যভিচার চলে কোথাও প্রকাশ্যভাবে, কোথাও প্রচ্ছন্নভাবে, আর