পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নানা সংস্কৃতির মিলন
৮৫

অর্থাৎ স্বর্গ-কামনা করিয়া যজ্ঞ করিবে। যজ্ঞের জন্য চাই হিংসা। তাই বৈদিক কর্মকাণ্ড কামনায় ও জীবহিংসায় কলুষিত ছিল।

 আর্যেতর প্রভাবের ফলে ক্রমে আর্যেরা যে হিংসা ছাড়িয়া অহিংসার মহিমা ঘোষণা করিতে লাগিলেন সে কথা পূর্বে একটু বলা হইয়াছে। কামনামূলক স্বর্গাদি ছাড়িয়া ক্রমে আর্যেরা নিষ্কামধর্মের ও বৈরাগ্যের জয়গান করিতে লাগিলেন। হিংসাময় যজ্ঞের স্থলে ভক্তি ও প্রেমের ধর্ম প্রচার করিতেই অবতারেরা আসিলেন। আর অবতারবাদের ফলে দেবতাদের স্থান ক্রমে অধিকার করিলেন মানুষ। মধ্যযুগের সন্তদের বাণীতে দেখা যায়, ‘ভক্তি দ্রবিড় দেশে উৎপন্ন’। পদ্মপুরাণেও (উত্তরখণ্ড ৫০. ৫১) দেখি, ভক্তি দ্রাবিড়দেশে উৎপন্না। কাজেই আর্যেরা ক্রমে ক্রমে আর্যেতর নানাবিধ উত্তম উত্তম সংস্কৃতির দ্বারাই পূর্ণ হইয়া উঠিলেন। আর্যেতর সংস্কৃতির একদল যেমন নারীদের স্বেচ্ছাচার ও অপ্রতিবারণ-বিধি মানিত (মহাভারত, সভা ৩১ অধ্যায়, তেমনি আর-একটা উচ্চতর সংস্কৃতি ছিল বৈরাগ্য, নিষ্কামধর্ম, সন্ন্যাস, কামনাজয় প্রভৃতির উপাসক। আর্যেরা কিন্তু প্রথমে বৈরাগ্যবাদী ছিলেন না। তাঁহাদের ঋষিরা ছিলেন বিবাহিত, অনেকের বহু পত্নীও ছিলেন। স্বয়ং মনুর দশটি পত্নীর কথা আগেই বলা হইয়াছে। কিন্তু জৈন-বৌদ্ধ আদর্শ ও বৈষ্ণব-ভাগবত আদর্শ হইল সন্ন্যাসের অনুকূল। আর্যেরা প্রাণপণ চেষ্টা করিলেন যেন বংশ-বিস্তার-বিরোধী এই সন্ন্যাসধর্ম তাঁদের না পাইয়া বসে। তাই তাঁহারা সন্ততিরক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতে লাগিলেন।

 জরৎকারু ছিলেন তপঃপরায়ণ। বিবাহ না করায় তাঁহার সন্তান হয় নাই, তাই তাঁহার পিতৃগণ অধোগামী হইলেন। অবশেষে তপস্যা ছাড়িয়া জরৎকারু নাগকন্যাকে বিবাহ করিয়া বংশরক্ষা করিলেন। পিতৃগণ আর অধোগামী হইলেন না (আদি ৪৫)। মন্দপাল ঋষি তপস্যার দ্বারা গতিলাভ করিতে না পারিয়া অগত্যা তির্যক-কন্যাকে বিবাহ করিয়া নিরয় হইতে রক্ষা পাইলেন (আদি ২২৯)।

 কাজেই দেখা যাইতেছে, বংশরক্ষা করার দিকে আর্যেরা অত্যন্ত সাবধান রহিলেন। ব্রহ্মনিষ্ঠ হইলেও যাহাতে সকলে গৃহধর্ম পালন করেন তাহার জন্য অনুশাসন রহিল। ক্রমে সবদিক বজায় রাখিবার জন্য চতুরাশ্রমের ব্যবস্থা হইল। তাহার প্রথমটা হইল গৃহস্থজীবনের, তাহার জন্য শিক্ষার কাল হইল ব্রহ্মচর্য। আর শেষটা হইল সন্ন্যাসের, তাহার জন্য প্রস্তুত হইবার কাল