প্ৰাচ্যবিদ্বেষের সুত্রপাত So জলপথেও রণতরণী সজ্জীভূত করিয়া, জলযুদ্ধের আয়োজনে ব্যস্ত হইয়া উঠিল । পুরাকালে ভূমধ্যসাগরতীরের যে সকল জাতি নিৰ্ব্বিবাদে বাণিজ্য করিয়া অর্থোপিাছজন করিত, তাহদের মধ্যে কেহ বাণিজ্যের জন্য, কেহ বা বাণিজ্যদ্রব্য লুণ্ঠন করিবার জন্য, বাণিজ্যপোতকে রণপোতে পরিণত করিতে আরম্ভ করিল। এক দিকে প্ৰাচ্য ও প্রতীচ্যের সমর-কোলাহল, অন্য দিকে প্ৰতীচ্য জলদসু্যর আক্রমণ ও লুণ্ঠনকৌশল খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভূমধ্য-সাগরতটে অরাজকতার অত্যাচার বদ্ধমূল করিয়া দিল । একদা বাণিজ্য-পথ হিন্দু ও বৌদ্ধের অধিকারভুক্ত থাকিয়া, প্ৰাচ্য ও প্রতীচ্যে রাজ্যের মধ্যে বিবিধ পণ্যসম্ভার বিনিময় করিতে গিয়া, জ্ঞানবিস্তারে পুরাতন সভ্যসমাজকে সমুন্নত কারিত ; সৰ্ব্বত্ৰ সুখসৌভাগ্য বিবৰ্দ্ধিত করিয়া, শান্তি সাম্রাজ্য-সংস্থাপনের আশায় সমগ্ৰ মানব-সমাজকে এক অখণ্ড মহাপরিবারে পরিণত কক্সিবার অ্যায়োজন করিত ;-সে শাস্তি তিরোহিত হইয়া গেল। নূতন আশা, নূতন উৎসাহ, নূতন নীতি, নূতন পথে প্রতীচ্য মানব-সমাজকে প্রাচ্য বিদ্বেষে পূর্ণ করিতে লাগিল। ইহাই ইতিহাসে “ইসলাম-বিপ্লব” বলিয়া পরিচিত। প্ৰতাচ্য লেখক বৰ্গ যে ভাবে এই "ইসলাম-বিপ্লব” লিপিবদ্ধ করিাতেন, তাহাতে পাঠকচিত্ত ইসলামের নামে ঘূণা, ঈর্ষা ও অসঙ্গত ইসলামবিভীষিকায় পূর্ণ হইয়া উঠিত। ইসলাম কেবল ধ্বংসলীলার দানবশক্তি বলিয়াই প্ৰতিভাত হইত। নিয়ত কৃপাণস্কন্ধে বসুন্ধর নরশোণিতে প্লাবিত করাই যেন ইসলামের ধৰ্ম্ম ; কুঠারহস্তে পৃথিবীর পুরাতন কীৰ্ত্তিচিহ্ন খণ্ড-বিখণ্ডিত করাই যেন ইসলামের পুণ্যব্ৰত ; জলে স্থলে ছল প্রতারণায় নিয়ত পরস্বাপহরণ করাই যেন ইসলামের প্রধান লক্ষ্য;- অধিক কি, মানব-সভ্যতার উজ্জ্বল প্ৰদীপ ফুৎকারে নির্বাপিত করিয়া, উন্নতিসোপান তমসাচ্ছন্ন করাই যেন ইসলামের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা বলিয়া
পাতা:ফিরিঙ্গি-বণিক্.djvu/২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।