পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসিয়াছে দুইজন ভূটিয়া কুলির মাথায় চড়িয়া অতিকায় কাঠের একটা সিন্দুক। সারা ক্যাম্প গেটের সম্মুখে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিল। প্রভু ক্যাম্পে ঢুকিয়া বাণী ছাড়িলেন, “কেল্লা ফতে তো গিয়া।”

 আমরা উল্লাসে চেঁচাইয়া উঠিলাম, “জয় প্রভুর জয়।”

 জন চারেক তরুণ বয়স্ক ডেটিনিউ ভিড় ঠেলিয়া আগাইয়া আসিয়া প্রভুকে ছোঁ মারিয়া চ্যাং দোলায় তুলিয়া লইল। প্রভু নিজের পায়ে হাঁটিবেন, ইহা যে আমাদেরই লজ্জা ও অপমানের কথা। চ্যাং দোলায় চাপিয়া হাতের ডাণ্ডাটাকে উর্দ্ধে পতাকার মত তুলিয়া ধরিয়া প্রভু অগ্রসর হইয়া চলিলেন, আমরা চলিলাম পিছনে ও অগ্রে রীতিমত একটা শোভাযাত্রা করিয়া।

 কমনরুমে কমিটির বিশেষ অধিবেশন তৎক্ষণাৎ বসিল, সদস্যদের ডাকার আর প্রয়োজনই ছিল না।

 কমিটিতে প্রভু উবাচ, “ভদ্রমহোদয়গণ আপনারা এই অধমের উপর যে গুরুদায়িত্ব চাপাইয়াছিলেন, আপনাদের আশীর্বাদে তাহা আমি পালনে সক্ষম হইয়াছি। সঙ্গের ঐ বাক্সটিই তার প্রমাণ।”

 প্রভুব বিনয়ে আমরা মুগ্ধ হইয়া গেলাম। শাস্ত্রে আছে, ফলবান বৃক্ষ কখনও উদ্ধত হয় না, মাপুরুষগণও তেমনি সর্বদা বিনয়ী হইয়া থাকেন। কমিটির মেম্বর নয়, তাঁহারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন, সংখ্যায় তাঁহারাই ভারী। নেড়া-মাথায় কম্ফর্টার জড়াইয়া অমর চ্যাটার্জি (দক্ষিণ কলিকাতা) আগাইয়া আসিয়া হাত বাড়াইয়া বলিল, “দিন প্রভু, একটু পায়ের ধূলো দিন।”

 ছিলা-ছেঁড়া ধনুকের মত প্রভুর ডান পা সম্মুখে সটান লম্বা হইয়া প্রসারিত হইল, চ্যাটার্জি খাবল মারিয়া পায়ের এক খামচা কাল্পনিক ধুলা লইয়া মাথায় মাখিলেন।

 প্রভু বলিলেন, “কল্যাণ হোক। ওস্তাদ একটা সিগারেট ছাড় তো।”

 সিগারেট ধরাইয়া একমুখ ধোঁয়া ধীরে নাসাপথে বমন করিয়া প্রভু বলিয়া চলিলেন,—যাহা বলিলেন, তাহার বিবরণী নিম্নে প্রদত্ত হইল।—

১০৩