চালান হইয়া আসিতে পারিয়াছিলাম। ইহাকেই বলে ভাগ্যবানের বোঝা, যাহা বহন করিবার জন্য ভগবান পর্যন্ত লোলুপ হইয়া উঠেন—আর মর্তের ভগবান মানেই রাজা অর্থাৎ গভর্নমেণ্ট।
১৯৩০ সাল, পূজা শেষ হইয়া গিয়াছে। ব্যারাকের হট্টগোল হইতে সরিয়া সেলে আশ্রয় নিয়াছিলাম। ফাঁসীর আসামী, ভয়ানক কয়েদী, পাগল প্রভৃতির জন্যই সেলের ব্যবস্থা। সেলকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবেও ব্যবহার করা হইয়া থাকে। এহেন ভয়ঙ্কর সেলে কি সুখে অথবা সখে আমি ব্যারাকের বন্ধুদের ছাড়িয়া একা বাস করিতে চাই, ইহা জেলার সাহেব কিছুতেই বুঝিতে প্রস্তুত ছিলেন না। শেষে বলিতে হইল যে, পড়াশুনা করার বদ অভ্যাসটা আমার আছে। সেলে আসিলে সেদিক দিয়া একটু সুবিধা হইবার আশা রাখি। আরও একটা কথা, এক থাকিতেই আমার ভাল লাগে।
জেলার বাবু যেন একটা আলোচনার বিষয় পাইলেন, কহিলেন, “বলেন কি? একা থাকতে ভালো লাগে?”
—“আজ্ঞে, আমার তো তাই লাগে।”
শুনিয়া জেলার বাবু শুধু বিস্মিতই নহে, একটু যেন ভীতও হইলেন,—“আমার তো একা থাকার কথা ভাবতেই ভয় করে। নিজেকে পর্যন্ত তখন আমার ভয় ভয় করে।”
হাসিয়া ফেলিলাম, কহিলাম,—“একা থাকেন নি কিনা, তাই ওরকম মনে হচ্ছে। আসলে কিন্তু একা থাকতেই আরাম।”
কথাটা জেলার বাবু একেবারে নস্যাৎ করিয়া দিয়া বলিলেন—“কি যে বলেন, মানুষ একা থাকতে আরাম পায়।—সেলেই যাবেন তবে?”
—“আজ্ঞে হাঁ, যদি আপনারা বাধা না দেন।”
— “না না, আমরা বাধা দিতে যাব কেন। কিন্তু ভয় পাবেন না তো?”
এ প্রশ্ন জেলারবাবু পূর্বেও করিয়াছেন, তাই এবার আমাকেই প্রশ্ন করিতে হইল—“ভয়ের কথা এত বলছেন, ব্যাপার কি বলুন তো?”
৩