পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —“হুঁ। সেদ্ধপাতা দিয়েই আবার চা করেছ?”

 —“এক কাপ চারের জন্য আর নতুন প্যাকেট ভাঙ্গিনি, খানিকট সেদ্ধ চা আবার গরম করে দিয়েছি।”

 প্যারীবাবু আর ক্রোধ সম্বরণ করিতে পারিলেন না, করিলেন, “তুমি মানুষ, না জানোয়ার? এ-চা মানুষে খেতে পারে?”

 বলিয়াই হাতের পেয়ালাটা কাঠের মেঝেতে ছুঁড়িয়া মারিয়া উঠিয়া পড়িলেন, ঝনঝন শব্দ করিয়া পেয়ালাটা টুকরা টুকরা হইয়া গেল। প্যারীবাবুর চীৎকারে ও পেয়ালার শব্দে ঠাকুর-চাকর অনেকে ছুটিয়া আসিল।

 গোবিন্দ প্যারীবাবুকে কহিল, “রাগ করে পেয়ালাটা ভাঙ্গলেন, এতে কার লোকসান হোল?”

 প্যারীবার গোবিন্দের দিকে একবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া পড়িলেন।

 পিছনে শোনা গেল যে গোবিন্দ উপস্থিত পাচক ও চাকরদের বলিতেছে, “দেখলি তো লেখাপড়া জানার গুণ? তোরা হলে তো রেগে আমার মুখেই পেয়ালা ছুঁড়ে মারতিস।”

 লক্ষ্য করিবার বিষয়, গোবিন্দ শুধু সত্যবাদীই ছিলনা, তার ন্যায়-অন্যায় বোধটাও প্রখর ছিল। কিন্তু তার এই নৈতিক চরিত্র গাম্ভীর্য ও ধৈর্য ক্রমেই আমাদের অসনীয় হইয়া উঠিল।

 ইতিমধ্যে একদিন গোবিন্দ চাকর মহলে ঘোষণা করিল যে, এর পরের বার আর সে চাকর হইয়া ক্যাম্পে আসিবে না, ডেটিনিউ হইয়াই আসিবে। ঘোষণাতে তার মর্যাদা উক্ত মহলে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাইল। বাবুরাও গোবিন্দকে এড়াইয়া চলিতে লাগিলেন।

 দিন দশেক পরে ভোরে একটু দেরি করিয়া টিফিন-ঘরে ঢুকিয়াছি। দেখি, খাঁ সাহেব (আবদুর রেজাক খাঁ) ঘরে আছেন, একটা বেঞ্চিতে উবু হইয়া হাঁটুর উপর হাত দুইটা টান করিয়া বসিয়া আছেন। পাশে গিয়া স্থান গ্রহণ করিলাম।

১২১