না। ভারতবর্ষের ঋষিরা একদা পরস্পরকে প্রশ্ন করিয়াছিলেন সৃষ্টির উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন কি? তাঁহারা জানিতে পারিয়াছিলেন, সৃষ্টির মূলে কোন উদ্দেশ্যই নাই, ইহা আনন্দ হইতে জাত, আনন্দে স্থিত এবং পরিণামে আনন্দেই অবসিত। মোট কথা, বিনা প্রয়োজনেই সৃষ্টি, এই কথাটাই আনন্দ শব্দ দ্বারা ঋষিরা বুঝাইয়া গিয়াছেন। আমি বিনা-প্রযোজনকে আনন্দ না বলিয়া অপ্রয়োজন বলিয়াছি, এই যা তফাৎ। অনেকে আবার ইহাকে লীলা বলিয়া থাকেন। যাঁর যেমন অভিরুচি!
আপনারা অবশ্যই বলিতে পারেন যে, এত ভূমিকার বা ভণিতার আবশ্যক নাই, কথাটা বলিয়া ফেলিলেই তো হয়, বেশ তবে বলিয়া ফেলা যাইতেছে—
লিখিতে গিয়া দেখিতে পাইতেছি যে বক্সা বন্দিজীবনের প্রযোজনীয় কথা বা কাহিনী এতাবৎ আমার কলমে তেমন আসিতেছে না। যাহা আসিতেছে, তাহা সমস্তই হাল্কা ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়।
কেন এমন হইল, তার উত্তরটাই ভূমিকায় বা ভণিতায় মক্স করিতে চাহিয়াছিলাম। বলিতে চাহিয়াছিলাম, দোষটা আমার স্বভাবের অর্থাৎ স্মৃতির। বন্দিজীবনের ভয়ানক ব্যাপার, গুরুতর বিষয় সমস্তই বিস্মৃতিতে তলাইয়া গিয়াছে, শুধু হালকা অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলিকেই স্মৃতি পরম মমতায় সঞ্চয় করিয়া রাখিয়াছে। যারা বা যে-সমস্ত ঘটনা বন্দিজীবনকে সহনীয় বা উপভোগ্য করিয়া রাখিয়াছিল, তাহারাই স্মৃতিতে একান্ত সত্য ও প্রধান হইয়া স্থান গ্রহণ করিয়াছে, আর বৃহুৎ বৃহৎ ঘটনা ও তার নায়কগণ বেমালুম স্মৃতি হইতে লোপ পাইয়াছে।
আমার স্বভাবের মধ্যে সঞ্চয়ী বলিয়আ যে-লোকটি রহিয়াছে, সে যে ঐতিহাসিক নহে, ইহা প্রমাণিত হইয়াছে। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনের দিকেই তার পক্ষপাতিত্ব, তাই বিষয়-বণ্টনে তিন ভাগেরও অধিক সে অপ্রয়োজনের ভাঁড়ারে ঠাসিয়া দিয়াছে। সেই স্বভাবটাই আমার স্মৃতিতে বসিয়া কলমের কর্ণধারী
১২৫