পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ও গম্ভীর পুরুষ। গীতার অনাসক্ত পুরুষ বলিয়া এঁকে আমি মনে করি। পুলিন দাসের পর প্রকৃতপক্ষে ইনিই অনুশীলন-পার্টির ধারক ও বাহক ছিলেন এবং ইঁহাকে অনুশীলন-পার্টির মেরুদণ্ড বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। ইঁহার চরিত্রশক্তি বিরুদ্ধ দলেরও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়া থাকে। দ্বীপান্তর, কারাদণ্ড এবং জেল-আইনের যাবতীয় শাস্তি মহারাজের জীবনের উপর দিয়া গিয়াছে। আন্দামানে প্রেরিত হইবার পূর্বে মহারাজের ‘জেল হিস্টরী’-টিকিটে শেষের দিকে এই কয়টি লাইন লিপিবদ্ধ ছিল—

 “He was one of the leaders of the Revolutionary Party—was suspected in 14 murders and dacoitics. Very dangerous.”

 আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করিতাম যে, সরকারী কর্মচারীকে খুন করিবার পর মুহূর্তেই ইনি ছুঁচে সূতা ভরিতে পারেন, এমনই মহারাজের নার্ভ। ইহা অত্যুক্তি নয়, সত্যই মহারাজ চরিত্রের সংযমে ও শক্তিতে এমনই সংহত ও আত্মস্থ ব্যক্তি। ১৯০৮ হইতে ১৯৪৬ সালের মধ্যে দীর্ঘ ৩০টি বছরই মহারাজ জেলে কাটাইয়াছেন। পৃথিবীর কোন দেশের কোন ব্যক্তি রাজনৈতিক কারণে এত দীর্ঘকাল জেলে কাটাইয়াছেন বলিয়া আমার জানা নাই। এদিক দিয়া পৃথিবীর ইতিহাসেই মহারাজের একটি বিশিষ্ট আসন রহিয়াছে।

 রাজনৈতিক হত্যা ও ডাকাতি বিপ্লবীদের কর্মপন্থার মধ্যে অবস্থার চাপে ও প্রয়োজনে গৃহীত হইয়াছিল। এই দুই প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ও চেষ্টায় যিনি বাঙলার সমস্ত বিপ্লবীদের পুরোভাগে স্থান গ্রহণ করিতে পারেন, অতঃপর তাঁহার সঙ্গেই আপনাদের পরিচয় করাইতেছি। আমাদের বীরেনদার (চ্যাটার্জি) পরিচয় পূর্বেও কিছুটা প্রদত্ত হইয়াছে। ইনিও অনুশীলন-পার্টির সদস্য। গৌরকায় সুপুরুষ। গলার আওয়াজ বাঘের মত, এঘরে ডাক দিলে ওঘরে চেয়ারে বসিয়া চমকাইয়া উঠিতে হয়। যৌবনে এই ব্রাহ্মণতনয় কতবার যে মাঝি হইয়া নিশীথ রাত্রে ঝড়ের পদ্মা পাড়ি দিয়াছেন, সে

১২৮