—“এই ঘরে? কখন?” বলিয়া ঘরের মধ্যে চোখটা একবার ঘুরাইয়া নিশ্চিন্ত হইয়া লইলেন।
আমি প্রশ্নের উত্তরে বলিলাম—“রাত আড়াইটা হবে।”
জেলারবাবু ধৈর্য রাখিতে পারিতেছিলেন না, অসহিষ্ণু হইয়া উঠিলেন, “খুলে বলুন না।”
খুলিয়া যাহা বলিয়াছিলাম তাহা সংক্ষেপে এই—
ছোট্ট সেলের একটিমাত্র দরজা, লোহার গরাদ ব্যতীত আর কোন বস্তু ছিল না, কাজেই বাতাস, বৃষ্টি ইত্যাদির অবাধ প্রবেশের ঢালা রাস্তা ছিল। দরজার পরেই ছোট্ট ইয়ার্ড দেয়ালঘেরা, তৎপরে কাঠের মজবুত একটি দরজা। রাত্রে দুই দরজাতেই তালা পড়িত। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত জাগিয়া একটা বই শেষ করি। অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম, মশারি ফেলিয়া বালিশে মাথা দিতেই ঘুমাইয়া পড়িলাম।
হঠাৎ এক সময়ে কি কারণে ঘুম ভাঙ্গিয়া যাইতেই চোখ খুলিলাম। দরজার দিকেই পাশ ফিরিয়া শুইয়াছিলাম। নেটের মশারি, তাই দৃষ্টি তেমন বাধা পায় নাই, দেখিলাম, অদ্ভুত রোগা তেমনি অদ্ভুত লম্বা একটা লোক দুই হাতে গরাদ ধরিয়া দাঁড়াইয়া আছে। দেয়ালের ওপাশের কবরের কথা মনে পড়িতেই দরজায় দাঁড়ানো উপস্থিতিটার পরিচয় সম্বন্ধে কোন সন্দেহই মনে রইল না, বুকটা কাঁপিয়া উঠিল। যতদূর মনে আছে গায়ে কাঁটাও দিয়াছিল। কিন্তু অমন করিয়া দাঁড়াইয়া আছে কেন? নড়ে না কেন? হঠাৎ হাসি আসিয়া গেল, মশারি তুলিয়া ফেলিলাম, যাহা ভাবিয়াছিলাম, তাহাই।
এইখানে জেলারবাবু প্রশ্ন করিয়াছিলেন, “আপনার গায়ে কাঁটা দিল, তারপরেই আপনার হাসি পেল।?”
—“আজ্ঞে, তাই পেল। ব্যাপারটা যে আমি বুঝতে পেরেছিলাম।”
— “কি ব্যাপার? কে দাঁড়িয়েছিল?”
—“কেউ না।”
৫