রবি (সেন), মহারাজ, জ্ঞানবাবু, প্রতুলবার এঁরাই পথ আটকে রাখলেন। আমি নূতন একটি দল খুলব।”
আমরা বলিলাম, “আছি আমরা আপনার দলে।”
—“হেঁ, তবেই হয়েছে। দুদিনেই ঘাঁটি ভেঙ্গে যাবে, তোমরা তো প্রত্যেকেই এক একটি লীডার। না বাপু, এত ধাক্কা সামলানো আমার সাধ্য নয়।” বলিয়া প্রস্তাবিত পটিটা জন্মিবার আগেই তিনি ভাঙ্গিয়া দিলেন।
অতঃপর যে দীর্ঘকায় ব্যক্তি একমাথা পাকা চুল লইয়া দণ্ডায়মান আছেন, তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হওয়া যাইতেছে। তিনি আমাদের মাস্টার মশায়, বাঙলার বাজনীতি ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ অধ্যাপক জ্যোতিষ ঘোষ। জ্ঞানী ও গম্ভীর ব্যক্তি, অথচ রসিকতার রোগ বা স্বভাব হইতে নিজেকে মুক্ত করিতে পারেন নাই। পড়াশুনা নিয়াই থাকেন, বেশীর ভাগ সময় শ্রীঅরবিন্দের বই পড়েন! বন্দীদেরও পড়াশুনায় সাহায্য করেন। জেল জীবনের অত্যাচারে একেবারে চলংশক্তিশূন্য হইয়াছিলেন। অধুনা চলাফেরা করিতে পারেন। তবে সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া উঠা-নামার সময়ে অপরের সাহায্য লইয়া থাকেন। সভা-সমিতিতে মাস্টার মশায়ের সভাপতিত্বের আসনটীতে একরূপ একচেটিয়া অধিকারই ছিল।
বাঙলা দেশে তিনি জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি বলিয়া পরিচিত। সুভাষচন্দ্র ও সেনগুপ্ত উভয় নেতারই সম্মানীয় ব্যক্তি তিনি ছিলেন। স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, কিন্তু সে-ক্ষতি মানসিক স্বাস্থ্যে ও তেজে ভগবান পূরণ করিয়া রাখিয়াছেন। বিখ্যাত বিপ্লবী গোপীনাথ সাহা মাস্টার মশায়েরই শিষ্য।
মাস্টার মশায়ের আর একটি পরিচয় আছে, যাহা বাইরের লোকে জানে না। তিনি শ্রীঅরবিন্দের শিষ্য না হইয়াও অনুরক্ত ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি নিজেও একজন গুপ্ত-যোগী। মাঝে মাঝে কাহারও মুক্তির খবর, কিংবা পারিবারিক কোন আসন্ন ঘটনা মাস্টার মহাশয় বলিয়া দিতেন এবং তাহা অক্ষরে অক্ষরে ফলিত। বেণুবাবু (রায়) একদিন মাস্টার মহাশয়কে সোজা জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি ভবিষ্যতের কথা কেমন করে বলেন?”
১৩১