উত্তরে মাস্টার মশায় দুই ভুরুর সংগমস্থলে আঙ্গুল রাখিয়া বলেন, “এখানে একটা পাখী এসে বসে, সেই আমাকে বলে দেয়।”
তারপর যোগ করেন, “এস্থানটিকে কি বলে জান? একে আজ্ঞাচক্র বলে। এখানে একটি আকাশ আছে, সে-আকাশ খুলে গেলে ভূত-ভবিষ্যৎ বর্তমান সব দেখা যায়।”
আমি নিজে এই বিষয়ে মাস্টার মশায়ের সঙ্গে কোন আলাপ করি নাই। কিন্তু মাস্টার মশায়ের যোগসাধনা ব্যাপার সম্বন্ধে শুনিয়াছি যে, তিনি নাকি একটি বিপজ্জনক পন্থা অনুসরণ করিয়া চলিতেছিলেন। মাস্টার মশায়ের মত নাকি এই যে, এই দেহকে সজ্ঞানে উত্তীর্ণ হইতে পারিলেই আলোক বা জ্যোতির্লোকে পৌঁছানো যায় এবং যে কোন পথ দিয়াই দেহ-উত্তরণ সম্ভব। মাস্টার মশায় চিরাচরিত পন্থায় আজ্ঞাচক্রে বা হৃদয়ে ধ্যান বা মন-সংযম না করিয়া পায়ের পথেই নাকি মনকে চালনা করিবার পন্থা ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। উদ্দেশ্য, ঐ পথে যোগীদের পরিভাষায় ‘শেষপাতাল’ পার হইয়া জ্যোতির্লোকে উত্তীর্ণ হইবেন। অনেকের মতে মাস্টার মশায়ের চলৎশক্তি ও দৈহিক শক্তির বিপর্যয়ের নাকি এই যৌগিক প্রক্রিয়াই বিশেষ কারণ। আমি নিজে অবশ্য এই মত পোষণ করি না। আমার ধারণা, জেলের অত্যাচারই মাস্টার মশায়ের দৈহিক অসুস্থতার মূল কারণ। মাস্টার মশায় একদিন সুভাষচন্দ্রকে বলিয়াছিলেন, তখন উভয়েই স্টেট-প্রিজনার, “এমন ঘুম দিব যে, মুক্তির ঠিক আগের দিন জাগব।” এই ঘুম অর্থে তিনি যে সমাধিকেই বুঝাইয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। অবশ্য তেমন ঘুম তিনি দেন নাই।—একদিক দিয়া বাঙলার বিপ্লবী সমাজে মাস্টার মশায়ের সমতুল্য ব্যক্তি আর দ্বিতীয় কেহ নাই, আমার বিশ্বাস।
তাঁহারই পাশে যে দীর্ঘ ও বলিষ্ঠকায় ব্যক্তিকে দেখিয়া মনে মনে ভাবিতেছেন যে, স্বাধীন দেশে জন্ম লইলে ইনি নিশ্চয় জেনারেল বা ফিল্ড মার্শাল হইতেন, তাঁহার নাম রবিবাবু (সেন)। ইনি অনুশীলন-পার্টির অন্যতম প্রধান নেতা
১৩২