চেষ্টায় ইনি যে-দলটি গঠন করিয়াছিলেন, বাঙলার বিপ্লবের ইতিহাসের বিশেষ একটি অধ্যায় তাঁদের দানে সমৃদ্ধ। মূলে ইনি যুগান্তর-পার্টির লোক। এঁর দলের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা প্রাপ্ত, অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করিবার সুযোগ তাঁহারা পাইয়াছেন। এঁর দলই “বি ভি” (বেঙ্গল ভলাণ্টিয়ার) ও “শ্রীসংঘ” এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এই দুই ভাগের তিনজন ব্যক্তির উল্লেখ করিতেছি, তাহা হইতেই হেমবাবুর পরিচয় পাইবেন— ভূপেনবাবু (রক্ষিত রায়), সত্যবাবু (গুপ্ত) ও অনিলবাবু (রায়)। প্রথম দুইজনই বিখ্যাত বি-ভির নেতা। ১৯৩০ সালে মেদিনীপুর জেলার কয়টি ম্যাজিষ্ট্রেট এই দলের হাতেই প্রাণ দেয়। লোম্যান হত্যাকাণ্ড, রাইটার্স বিল্ডিং-এ জেল বিভাগের আই-জির হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত বিনয় বসু, দীনেশ গুপ্ত প্রমুখ বিখ্যাত বিপ্লবীগণ এই বি-ভিরই সদস্য। ফল দিয়া বৃক্ষের পরিচয়, এই সংকেতটুকু প্রয়োগ করিলেই হেমবাবুর প্রকৃত পরিচয় আপনারা পাইবেন।
দুই বন্ধুর সঙ্গে আপনাদের পরিচয় এই সঙ্গেই করাইতেছি। তাঁহারা হইলেন ভূপেনবাবু (রক্ষিত) ও সত্যবাবু (গুপ্ত), বিনয়-দীনেশ-বাদল এই ত্রয়ীর নেতা। সত্য গুপ্তের মানসিক গঠন সৈনিকের, চরিত্রেও তিনি সৈনিক। নির্ভীক, তেজস্বী ব্যক্তি তিনি। বিপ্লবীদের মধ্যে মিলিটারী মানুষ বলিয়া তাঁহার প্রসিদ্ধি আছে। সাধারণের নিকট তিনি মেজর গুপ্ত বলিয়া পরিচিত। সরল মনখোলা মানুষ, কথার মারপ্যাচের কোন ধার ধারেন না, কিছু একটা করিতে পারলেই তিনি সন্তুষ্ট।
আর ভূপেনবাবু শান্ত, সংযত ও স্বল্পবাক। শিক্ষা অর্থে যদি মনের সুরুচিকে বুঝায়, তবে ডেটিনিউদের মধ্যে ভূপেনবাবুর সমকক্ষ ব্যক্তি খুব কমই আছে। এত মার্জিত ও ভদ্ররুচির মানুষ আমি নিজে বেশী দেখি নাই। এঁর চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব বয়স্কদেরও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিত। অত্যন্ত দৃঢ়সঙ্কল্পের মানুষ বলিয়া এঁর খ্যাতি আছে। ভূপেনবাবুর প্রকৃত পরিচয় তিনি সাহিত্যিক, তিনি গুণী, তিনি সুন্দরের উপাসক। সুন্দরের উপাসক কেন যে
১৩৯