প্রলয়ংকর শংকরের পূজারী হইলেন, এ প্রশ্ন আপনারা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করিতে পারেন।
এখন আমরা যাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছি, তাঁহার নাম পূর্বেই উল্লেখ করিয়াছি, তিনি অনিলবাবু, পূর্বোক্ত শ্রীসংঘের নেতা। স্বাস্থ্য দেখিয়া যাহা আপনার মনে হইয়াছে, তাহা ঠিকই, ইনি কুস্তিগীর পালোয়ান ব্যক্তি। এ গেল বাহ্যিক পরিচয়, চোখ থাকিলেই নজরে পড়ে। ইনি সঙ্গীত বিদ্যায় পারদর্শী ও সাহিত্য রসিক, কবিতা ও প্রবন্ধ উভয় বিভাগেই লেখনী চালনা করিন থাকেন। পণ্ডিত ব্যক্তি বলিয়া খ্যাতি আছে, সঙ্গীত শাস্ত্রেও পড়াশুনা নাকি গভীর, দর্শন ইত্যাদিতে বিশেষ অনুরাগ, এক কথায়, অনিলবাবুর মধ্যে বিভিন্ন ও বিপরীত বহু বিষয়ের একটা সমাবেশ রহিয়াছে। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ ইনি। যদিও বাঙলার বিপ্লব আন্দোলনে প্রবীণদের তুলনায় নবাগন্তুক বা নবীন, তথাপি বিশেষ সম্ভাবনা লইয়াই ইনি আসিয়াছিলেন। কিন্তু আমার সর্বদাই মনে হইয়াছে যে, ইনি পথ ভুল করিয়া আসিয়া পড়িয়াছেন। এঁর স্থান বিপ্লবের ক্ষেত্র নহে, এঁর প্রকৃত স্থান ছিল দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। ইনি স্বধর্মচ্যুত, এই ধারণা আমার মনে বরাবরই আমি পোষণ করিয়াছি।
এখন আপনাদের আমি যুগান্তর পার্টির ‘ত্রিশূলের’ সঙ্গে পরিচয় করাইতে চলিয়াছি। ‘ত্রিশূল’ কথাটির ব্যাখ্যা আবশ্যক। ছ’ নম্বর ব্যারাকটি একান্তভাবে যুগান্তর-দলের দখলে ছিল। ভোরের দিকে ছ’ নম্বরের নয়নাঞ্জনবাবুর সীটে বসিয়া আলাপ করিতেছিলাম, এমন সময় দরজার দিকে দৃষ্টি দিয়াই নয়নাঞ্জনবাবু একটু জোরে বলিয়া উঠিলেন—“ত্রিশূল”। কোণের সীট হইতে ভূপেন মজুমদারের গলার আওয়াজ শুনিলাম—“শাল?” নয়ানবাবু উত্তর দিলেন, “শেল।” ইতিমধ্যে পূর্ণবাবু (দাস) ঘরে আসিয়া ঢুকিয়াছেন। ব্যাপারটা অনুমানেই কতকটা বুঝিয়াছিলাম যে, ইঁহারা সাংকেতিক ভাষায় একে অপরকে সতর্ক করিতেছেন। চুরুট-সিগারেটের অভ্যাস অনেকেরই ছিল, তাহা ছাড়া নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার বিষয় ও বক্তব্যও সব সময়ে গুরুজনদের
১৪০