হইলেই আপনাদের ছুটি। ভদ্রলোকের নাম পঞ্চানন চক্রবর্তী, জন্মে ব্রাহ্মণ, কিন্তু স্বভাবে ক্ষত্রিয়। এঁকে মহাক্ষত্রিয় আখ্যা দিতে অন্ততঃ আমার কোন দ্বিধা নাই। আমার সমগ্র জীবনে এঁর মত তেজস্বী ও নির্ভীক পুরুষের সাক্ষাৎ পাই নাই। সাহসের জন্য এঁকে সাধনা করিতে হয় নাই, ভয়শূন্য হইয়াই ইনি জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। বিপদ দেখিলে এঁর একটা স্বাভাবিক উৎসাহ ও আনন্দ জন্মিয়া থাকে। এই কারণে দেশবন্ধুর বিশেষ স্নেহ ইনি আকর্ষণ করিতে সক্ষম হহয়াছিলেন। এঁর জীবন ঘটনাবহুল। ১৯২৩ সালে এঁর সম্বন্ধে গভর্ণমেণ্টের উক্তি ছিল— “The most turbulant youngman of Bengal.” এই মহাক্ষত্রিয়ের মধ্যে একজন সাহিত্যিক ও দার্শনিক লুক্কায়িত রহিয়াছে। বাঙলার জেল-আইনের একটি বিশেষ সংশোধনের সঙ্গে এঁর নাম জড়িত। ব্যাপারটি এই—
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে ছয় শতের উপর বন্দী ফরিদপুর জেলে আবদ্ধ করা হয়। জেলে স্থানাভাব দেখা দেয়, তিন শত বন্দীর থাকিবার মস্ত জায়গায় এই বৃহৎ সংখ্যাটিকে ঠাসিয়া ভরা হয়। ফলে স্বদেশীদের সঙ্গে জেল কতৃপক্ষের ঠোকাঠুকি, তার ফলে একদিন সন্ধ্যাকালে শ কয়েক বন্দী বাঁকিয়া বসিলেন যে, তাঁহারা ঘরে বন্ধ হইবেন না। জেলার বিপদে পড়িলেন, অনুনয় বিনয়ে কোন ফল দিল না, অবশেষে তিনি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে ফোন করেন। উত্তর পাইলেন,
“Go home and get sound sleep. I have managed German prisoners. They are Bengali Babus. I am coming to-morrow morning.”
ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ হগ সাহেব, পরে যিনি আসামের গভর্ণর হন।
পরদিন ভোর বেলা তিনি সশস্ত্র পুলিশবাহিনী লইয়া জেলে ঢুকিলেন। জেল-গেটে জেলারকে হুকুম দিলেন whipping Triangle খাটাইতে।
১৪৩