পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সুধীরবাবু (বসু) ছিলেন শিক্ষিত আর্টিস্ট। রবীন্দ্রনাথের ক্ষুদ্র একটি চিত্র অংকিত করিয়া নীচে অভিনন্দনটি চীনা-কালিতে লিপিবদ্ধ করিয়া দেন। একটি বাঁশের নলের আধারে ‘অভিনন্দনপত্রটি’ রবীন্দ্রনাথের নিকট প্রেরিত হয়।

 রবীন্দ্র-জয়ন্তী কমিটির পক্ষ হইতে অমল হোম মহাশয় এক পত্রে জানান যে, অভিনন্দনটি কবিকে মুগ্ধ করিয়াছে। তিনি প্রত্যুত্তরে একটি ‘প্রত্যাভিনন্দন’ কবিতা লিখিয়াছেন। কবির স্বহস্তে লিখিত “প্রতাভিনন্দনটি” অভিনন্দন রচয়িতাকেই যেন দেওয়া হয়, ইহাই কবির ইচ্ছা। দুর্ভাগ্যবশতঃ কবির স্বহস্তের সেই ‘প্রত্যাভিনন্দন’-পত্রটি পৌঁছিতে পারে নাই। পরে জানিয়াছি লেখাটী বক্সা-ক্যাম্পের অফিস হইতে কবির নিকট ফিরিয়া গিয়াছে। কবি লেখাটী শ্রীযুত অনল হোমকে দিয়াছেন। এখন তাহা শ্রীযুত হোমের নিকট আছে।

 আমাদের অভিনন্দনপত্রটির প্রতিলিপি প্রদত্ত হইল—

 বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের চরণকমলে—

 ওগো কবি,

 তোমায় আমরা করিগো নমস্কার।

 সুদূর অতীতের যে-পুণ্য প্রভাতক্ষণে তোমার আবির্ভাব, আজ বাঙলার সীমান্তে নির্বাসনে বসিয়া আমরা বন্দিদল তোমার সেই জন্মাক্ষণটিকে বন্দনা করি। আর স্মরণ করি বিরাট মহাকালকে, যিনি সেই ক্ষণটির দ্বারপথ উন্মুক্ত করিয়া এই দেশের মাটির পানে তোমাকে অঙ্গুলি-ইঙ্গিতে পথ দেখাইয়াছেন।

 যেদিন জ্যোতির্ময় আলোক-দেবতা তমসা-তীরে প্রথম চোখ মেলিয়া চাহিলেন, আলোকবহ্নির আত্মপ্রকাশই তো সেদিনকার একমাত্র সত্য নয়। সেই একের প্রকাশে সুপ্তির অন্ধকার তটে তটে বিচিত্র বহুও যে আপনাকে জানিয়া জানাইয়া উঠিয়াছে। হে মর্ত্যের রবি, তোমার আকাশ-বিহারী বন্ধুর সঙ্গে তোমার যে পরম সাদৃশ্য আমরা দেখিতে পাইয়াছি। তুমি নিজেকে প্রকাশ করিয়াছ, তাই তো বিস্মৃতির অখ্যাত প্রদেশে আমাদের মাঝে আলো জ্বলিয়া উঠিয়াছে। হে ঐশ্বর্যবান, তোমার মাঝে জাতি আপন ঐশ্বর্যের সন্ধান পাইয়াছে।

১৫১