হে ধ্যানী, তোমার চোখে জাতি মহান বিশ্ব-মানবের স্বপ্ন দেখিয়াছে।
হে সাধক, তোমার হাতে জাতি আপনার সাধনার ধন গ্রহণ করিয়াছে।
তাই কি তুমি প্রত্যেকের পরমাত্মীয়?
হে ঋষি, তোমার জনমক্ষণে এই বাঙলায় জনমগেহে সমগ্র জাতির জন্ম-জয়ধ্বনি বাজিয়া উঠিয়াছিল। অজাত আমরা সেদিন অজানা নীহারিকাপুঞ্জের মাঝে না জানিয়াও শিহরিয়া উঠিয়াছিলাম। আজ জাগ্রত জীবনের যাত্রাপথে দাঁড়াইয়া হে অগ্রজ, তার ঋণ শোধ করি। আমরা না আসিতে তুমি আমাদের জীবনের জয়গান গাঁথিয়াছ। আমরা সে-দান প্রণামের বিনিময়ে আজ অঞ্জলি পাতিয়া গ্রহণ করিতেছি।
তোমার জন্মক্ষণটি পিছনের অতীতে হয়তো হারাইয়া গিয়াছে,—কিন্তু আজিকার এই স্মরণ-দিনে আমাদের কণ্ঠের জয়ধ্বনি সম্মুখের অগণিত মুহূর্তশ্রেণীতে প্রতিধ্বনিত হইয়া অনন্তে শেষ সীমান্ত-পারে গিয়া পৌঁছুক।
হে কবিগুরু, “তোমায় আমরা করি গো নমস্কার।” অবরুদ্ধের অভিনন্দন গ্রহণ কর। ইতি গুণমুগ্ধ সমবেত রাজবন্দী
২৫শে বৈশাখ
আমাদের অভিনন্দনের প্রত্যুত্তরে কবিগুরু পাঠাইলেন “প্রত্যভিনন্দন”। ঋষি কবির প্রত্যভিনন্দন, আমরা স্বভাবতঃই একটু বিহ্বল হইয়া পড়িয়াছিলাম। অভিনন্দনের উত্তর হয়তো একটা তিনি দিতে পারেন, কিন্তু তাই বলিয়া বিনিময়ে তিনিও আমাদের জন্য অভিনন্দন পাঠাইবেন, ইহা বস্তুতঃতই আমরা আশা করি নাই। বুঝিলাম, বাঙলার বিপ্লবীদের প্রণাম বাঙলার কবিকে সত্যই বিচলিত করিয়াছে, কাজেই এই অগ্নি-প্রণামের প্রত্যুত্তরে ঋষির অভিনন্দন উৎসারিত হইয়াছে বিপ্লবীদের জন্য নয়, বিপ্লব-শক্তির জন্য।
১৫২