পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসিয়াছেন! কিন্তু তিনি অজাতশত্রু ছিলেন না, অনেকে তাঁর পিছনে ফেউ লাগিলেন, বিশেষ করিয়া সন্তোষদা (দত্ত)।

 খাওয়া-দাওয়ার পর দুপুরে তিন-নম্বর ব্যারাকের বারান্দায় পাশা বসিত, একদিকে থাকিতেন প্রতুলবাবু (গাঙ্গুলী) ও সন্তোষদা, অপরপক্ষে থাকিতেন ক্ষিতীশবাবু ও ভূপতিদা (মজুমদার)। তখন অহি-নকুল-সম্পর্কে নিত্যসম্পৃক্ত সন্তোষদা ও ক্ষিতীশদার যে বাক্-যুদ্ধ চলিত, তাহাতে উপর-নীচ সকল ব্যারাকের বহু দর্শককে আকর্ষণ করিয়া আনিত। অর্থাৎ বিনা পয়সায় এমন দৃশ্য দেখিবার জন্য আমরা ছোটখাটো একটা ভীড় জমাইয়া খেলার আসরটিকে চক্রাকারে বেষ্টনপূর্বক অবস্থান করিতাম।

 বাক্‌-যুদ্ধ অনেক সময় বাহু-যুদ্ধে গিয়া গড়াইত। এ-পাশ হইতে ক্ষিতীশদা তাঁর মোটা-সোটা খাটো হাতে উদ্বাহু হইয়া আক্রোমণোদ্যত হইতেন, পাশার ছকের ও-পাশ হইতে সন্তোষদা তাঁর সবল দীর্ঘ হাত বাড়াইয়া তাহা ঠেকাইতেন। অনেক সময় মনে হইত, সন্তোষদা দুই হাতে এক ক্রুদ্ধ সিংহের থাবা কোনমতে মুঠায় চাপিয়া ধরিয়া “ত্রাহি ত্রাহি” জপ করিতেছেন। আমরা দর্শকগণ সন্তোষদার এই বিপদে কিছুমাত্র সহানুভূতি বা মমতা না দেখাইয়া উল্লাসে হৈ-হৈ করিয়া উঠিতাম। ভুপতিদা মন্তব্য করিতেন, “গজ-কচ্ছপের লড়াই।” শুনিয়া আমরা হাস্য করিতাম এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, গজ-কচ্ছপও হাসিতে যোগ দিয়া আমাদের হাস্য ও আনন্দ দুই-ই বৃদ্ধি করিত।

 সেদিন বাক্‌-যুদ্ধ গজ-কচ্ছপের বাহুযুদ্ধে আসিয়া গিয়াছে। হাড়ের পাশা দুই হাতের পাতায় ঘর্ষণপূর্বক মড়মড় শব্দ তুলিয়া প্রতুলবাবু যুদ্ধবিরতির অপেক্ষা করিতেছিলেন।

 পাশার দান দিবার আগে প্রতুলবাবু শান্তভাবে হাসিকে অভ্যন্তরে আবদ্ধ রাখিয়া বলিলেন, “এ তোমার বড় অন্যায়, সন্তোষ। গোল ঠেকাতে পারেননি বলে যে পাশা খেলতে পারবেন না, এ তোমার কোন কাজের কথা নয়।”

১৫৭