মাঝে বাতাসে শুকনো পাতা, ধূলো, খড়কুটা উড়াইয়া আনে— যেন সন্ন্যাসী শঙ্করের মুখ-নিশ্বাসে উৎক্ষিপ্ত ধুনীর ভস্মরাশি।
চোখ বুজিয়া ভাবিতেছিলাম, বাতাসে নিমগাছের শুকনো পাতা সর সর করিয়া ঝরিয়া পড়িল, সিমেণ্ট বাঁধানো ইয়ার্ডে শুকনো পাতাগুলির মৃদু ঘর্ষণ শব্দ কানে প্রবেশ করিল। মনে হইল, দূরে নির্জন প্রান্তরে যেন পথচারী কোন্ সন্ন্যাসীর হস্তের লৌহবলয়ে ও চিমটায় ঝনৎকার শুনিতে পাইতেছি।
কোলের উপর খোলা বই পড়িয়া—নিজের চিন্তায় নিজে নিমগ্ন হইয়াছিলাম। সেলের সদরগেটে পুলিস-প্রহরী আমারই প্রদত্ত সিগারেট মুখে লইয়া দরজায় ঠেস্ দিয়া বসিয়া ধুমপান ও উদ্গীরণ করিয়া চলিয়াছে।— হঠাৎ বাহিরে একটা হৈ-হৈ উঠিল। ডেটিনিউ বন্ধুরা ওয়ার্ড হইতে এদিকে আসিতেছেন, নিশ্চয় কোন উত্তেজনার কারণ ঘটিয়াছে।
শচীশ সরকার ও শরৎ দাস মত্ত-মাতঙ্গের মত হুড়মুড় করিয়া আসিয়া সেলের প্রাঙ্গনে প্রবেশ করিলেন।
কহিলেন,—“উঠুন, আর বসে থাকতে হবে না। কর্ম্ম হয়ে গেছে।”
উঠিলাম বটে, কিন্তু কি কর্ম হইয়া গিয়াছে জিজ্ঞাসা করিলাম না। বলিবার জন্য ইঁহারাই ছট্ফট্ করিতেছেন, 'আমি কেন খামাকা মাঝখান হইতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসার পরিশ্রমটা করিতে যাই।
মুখে হাসি লইয়াই বলিলাম, “চলুন, ভিতরে চলুন।”
বাহিরে বসিবার সুবিধা ছিল না, সেলের ভিতরে গিয়া ঢুকিলাম। শরৎ দাস চেয়ারটার কাঁধ ধরিয়া হাতে ঝুলাইয়া ঘরের মধ্যে লইয়া গিয়া তাতে উপবেশন করিলেন, আর শচীশ সরকার লম্বা মোটা হাতে ডেক-চেয়ারটার কান ধরিয়া ঘরের মধ্যে হেচড়াইয়া টানিয়া লইয়া তাহাতে আসন লইলেন। আমি গিয়া লোহার খাটে বিছানায় উঠিয়া বসিলাম।
বসিয়া মুখ তুলিয়া চাহিলাম, অর্থাৎ এখন কার্যটা যাহা হইয়া গিয়াছে, তাহা বলিতে আজ্ঞা হয়।
৮