গেল। রবিাবু সটান ক্ষিতীশদার অভিমুখে ঘুরিয়া দাঁড়াইলেন মুখের ভাবখানা এই—বলি ব্যাপারটা দেখিয়াছেন, কি মনে হয়? আর ক্ষিতীশদার মুখের ভাবও দেখিবার মত হইল, ঘুঁষিটা যেন বলের বদলে তাঁরই মুখে লাগিয়াছে।
রবিবাবু খেলা শেষ হইবার অপেক্ষায় ছিলেন। গোলপোস্টের পিছনে দাঁড়াইয়া ক্ষিতীশবাবু এতক্ষণ যেসব মর্মভেদী বাক্যবাণ অঙ্গভঙ্গী সহযোগে একতরফা নিক্ষেপ করিয়াছেন, খেলাতে আবদ্ধ থাকায় এতক্ষণ তার কোন প্রত্যুত্তর দেওয়া হয় নাই। এবার অবসর মিলিয়াছে।
রবিবাবু ডাকিয়া কহিলেন, “সন্তোষ, ধর তো।” বলিয়া চোখের ইঙ্গিতে শিকার দেখাইয়া দিলেন।
মোটা শরীর ও ভুঁড়িপেট লইয়া শিকার তখনও গোলপোস্টের পিছনেই ছিলেন। সন্তোষবাবুকে অগ্রসর হইতে দেখিয়া ক্ষিতীশবাবু খেঁকাইয়া উঠিলেন, “আসুক না দেখি।” বলিয়া কিন্তু এক-পা-দু-পা করিয়া পিছনে হটিতে লাগিলেন। সারা গায়ে ও কাপড়ে কাদা লইয়া সন্তোষ দত্ত ক্ষিতীশবাবুকে গিয়া জাপটাইয়া ধরিলেন।
উপরে পাহাড়ের গ্যালারীতে ও নীচে মাঠে যত দর্শক ছিলেন, পরম উল্লাসে জয়ধ্বনি করিয়া উঠিলেন। চীৎকার শুনিয়া সিপাহীরা পর্যন্ত ফিরিয়া আসিল, খেলা শেষে তাহারা ব্যারাকের দিকে চলিয়া গিয়াছিল।
উঃ, কী আলিঙ্গন! যেন অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্র ভীমকে বাহুবেষ্টনে পাইয়াছেন। আলিঙ্গনাবদ্ধ দুই বীর জাপটাজাপটি করিয়া ধরণীতলে নিপতিত হইলেন এবং ভীমরুলের কামড়-খাওয়া জীবের মত গড়াগড়ি যাইতে লাগিলেন।
রবিবাবু তফাতে দাঁড়াইয়া দেখিবার মত লোক ছিলেন না। আগাইয়া গিয়া ক্ষিতীশবাবুকে ধরিয়া এ-পাশ ও-পাশ করাইতে লাগিলেন— যেন অতিকায় একটি মৎস্যকে ভাজিবার পূর্বে উল্টাইয়া পাল্টাইয়া মশল্লা মাখাইয়া লইতেছেন।
ক্ষিতীশবাবু যখন উঠিয়া দাঁড়াইলেন, তখন দেখা গেল যে, জলে-কাদায় তিনি এক কিম্ভুতকিমাকার রূপ পরিগ্রহ করিয়াছেন। মোটা গোঁফজোড়ায় কাদা
১৬২