রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে কম্যুনিজম প্রকৃতপক্ষে প্রবেশ লাভ করে এবং সমর্থক সংগ্রহ করে। আন্দামানেও ঠিক এই একই ব্যাপার পরিলক্ষিত হইয়াছিল। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার-লুণ্ঠন মামলার বিপ্লবী বন্দীরাও অবশেষে কম্যুনিস্ট দলে নাম লিখাইয়াছিলেন। বাঙলার কম্যুসিস্ট-পার্টির প্রকৃত শক্তি জেলেই সংগৃহীত হইয়াছিল।
শ্রেণীহীন সমাজকে তো স্বপ্ন বলিয়া মন্তব্য করিয়া বসিলাম, কিন্তু কোথাকার জল কোথায় গিয়া গড়াইল, তাহাই ভাবি। উক্ত স্বপ্ন আজও স্বপ্নই আছে এবং স্বপ্নই থাকিবে, কিন্তু কম্যুনিস্ট পার্টিটা কিছু আর স্বপ্ন নয়, তাই কমরেডের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইলে আশ্চর্য হইবার কিছু নাই।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এই যে, ইহারা আগে কম্যুনিস্ট হয়, পরে কম্যুনিজম গ্রহণ করে। জেলখানাতে যতটুকু দেখিয়াছি, তাহা হইতেই এই ধারণা আমার হইয়াছে। পিতা হিন্দু হইলে যেমন সন্তানসন্ততিরা হিন্দু হয়, কোন দল বা উপদলের নেতা কম্যুনিস্ট হইবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার অনুবর্তিগণের ধর্মান্তর ঘটিয়া থাকে। আমার বিস্ময়ই বোধ হইত যে, ইহা কী চরিত্র? আগে কম্যুনিস্ট হওয়া পরে কম্যুনিজম গ্রহণ! এ যেন আগে মুসলমান হইয়া পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ।
সেদিন আমি তর্কযুদ্ধে কি বক্তব্য ও মনোভাব ব্যক্ত করিয়াছিলাম, তাহা আজ আর স্মরণ নাই। শুধু এইটুকু বিশেষভাবে স্মরণ আছে যে, আমার সমগ্র অস্তিত্ব কম্যুনিস্ট মতবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিল। অর্থাৎ আমার স্বভাবের উপর এই ঘটনা হাতুড়ী-আঘাতের কাজ দিল, দেখিলাম স্বভাবটি আমার বিশেষ মূর্তি পরিগ্রহ করিতে চলিয়াছে। আমি কম্যুনিজমের শুধু প্রতিবাদী নহি, ঘোর বিদ্বেষীই হইয়া উঠিলাম।
কোন মতবাদের প্রতি বিদ্বেষ দ্বারা চরিত্রের নেতিবাচক দিকটাই শুধু ব্যক্ত হয়, চরিত্রের নিজস্ব স্ব-রূপটি তাহাতে ব্যক্ত হয় না। আমার স্বভাবের নেতিবাচক দিকটাও একদিন এইভাবে ব্যক্ত হইয়া পড়িল।
১৬৬