পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাছে অসহ্য মনে হয়। হাতে গভর্নমেণ্ট পেলেই যে মানুষকে তার জীবনের অর্থ সম্বন্ধে পথ নির্দেশের অধিকারও তার হবে, একে আমি বেআদপী মনে করি। জীবনের অর্থ যদি বুঝতে চাই, তার জন্য মরে গেলেও আমি মার্কস, লেনিন, ষ্টালিনদের কাছে যেতে রাজী নয়। জান, চোখ বুজলে আমি কি দেখি? দেখি কম করেও তিন হাজার বৎসর এই দেশের বোধিবৃক্ষতলে, গুহায়-গহ্বরে, পর্বতে-প্রান্তরে সাধকশ্রেণী ধ্যানাসনে উপবিষ্ট। তিন হাজার বৎসর, ধারাবাহিক এই ধ্যানের সত্যানুসন্ধান। আমি যাব জীবনের অর্থ জানতে এই ক্ষণিকের বুদ্বুদ মার্কস ও লেনিনের কাছে? তুমি জান না, আমার সমস্ত অস্তিত্বে কী জালা ধরে এই অর্বাচীনদের আস্পর্ধায়, অনধিকার চর্চায়। আমি ঋষির দেশের মানুষ, আমি বুব্ধ-শংকর-চৈতন্যের সাধনার উত্তরাধিকার-ক্ষেত্রের অধিবাসী, আমি রামকৃষ্ট-বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথের মানসভূমির বাসিন্দা। সমস্ত পৃথিবীও যদি তোমার কম্যুনিষ্ট হয়, তবু আমি বলব যে, গোল্লায় যাও, আমাকে বিরক্ত করো না।”

 ইহাই ছিল আমার মনোভাব। হিমালয়ের ক্রোড়ে বসিয়া গভীর নিশীথ রাত্রে সেদিন আমার সত্তার সমস্ত আবেগ আমি বন্ধুর নিকট অবারিত করিয়া দিয়াছিলাম। এই আত্মমোক্ষণে মনটা শান্ত হইল।

 জিজ্ঞাসা করিলাম “তুমি কি বল?”

 পঞ্চাননবাবু ধীরে ধীরে উত্তর দিলেন, “যাহা সত্য, তাহা আমার একান্ত আপন ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে আমি মাথাব্যথা করি না, বাদপ্রতিবাদও করি না। দেশের স্বাধীনত। চাই, তা যেভাবে যে-পথেই আসুক, তাতেই আমি প্রস্তুত। আমার নিজের কথা এর মধ্যে কিছু নাই। কম্যুনিস্ট হলেই যদি স্বাধীনতা আসে, আমি তাতেও প্রস্তুত। এই আমার সোজা হিসাব। আমার সত্য-মিথ্যার হিসাব আমি এর সঙ্গে জড়াইনে।”

 গভীর রাত্রে উভয়ের নিকট উভয়ের হৃদয়ের দ্বার কৈশোর দিনের মতই আর একবার আমরা উদ্ঘাটিত করিয়াছিলাম। হিমালয় এই হৃদয়োদ্ঘাটনের মৌন সাক্ষী রহিল!

১৭২