পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাধ্য হইলাম। এতবড় পাজী মানুষ জেলদারোগাদের মধ্যেও আমরা খুব কমই দেখিয়াছি।

 কোট্টাম সাহেবের ছবি বা কীর্তি স্মরণে উদিত হইলেই সঙ্গে সঙ্গে একটি কথা বড় বিশেষ করিয়া আমার মনে জাগে। কথাটি এই, দুর্বল ব্যক্তির হাতে কদাচ ক্ষমতা দিতে নাই, দিলে সর্বনাশ অনিবার্য। বিশেষ করিয়া যাহারা অতি সহজেই বিচলিত হয়, বিপদের সম্ভাবনাতেই যাহাদের মাথা ঘুরিয়া যায়, তেমন ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেওয়ার মত বিপজ্জনক ব্যবস্থা আর হইতে নাই।

 টাকার যেমন একটা গরম আছে, শক্তিরও তেমনি একটি গরম আছে। শক্তিকে যাহারা সহজ ও স্বচ্ছন্দভাবে বহন করিতে পারে না, তাহারা বহুর ক্ষতি তো করিবেই, নিজেরও ক্ষতি তাহারা করিয়া বসে। শক্তি পাওয়াই যথেষ্ট নহে, শক্তির উপর আধিপত্য অর্জিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া চাই।

 এইজন্যই ভারতীয় সাধক-সমাজে শক্তি-অর্জন যেমন সিদ্ধি বলিয়া পরিগণিত হয়, শক্তি বর্জন তার চেয়েও শ্রেষ্ঠতর সিদ্ধি বলিয়া বর্ণিত হইয়া থাকে। শক্তি বর্জন মানে শক্তিকে নিজের স্বভাবের মধ্যে সংহরণ করিয়া গোপন করা। যে-শক্তি নিয়ন্ত্রিত ও সংযত নহে, সে-শক্তির স্বভাবে প্রলয় ও অকল্যাণ নিহিত আছে, ইহার দৃষ্টান্ত ভারতীয় পুরাণের দৈত্য ও অসুরগণ। শক্তির সিদ্ধি তাহাদের ছিল, কিন্তু সে-শক্তিকে শান্ত করিয়া দেবশক্তির কল্যাণ স্বভাবটুকু আয়ত্তগত করিবার কৌশল তাহারা জানিত না। আমার বহুদিনের বদ্ধমূল বিশ্বাস, সৃষ্টিতে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিমান, যার চিত্ত সর্বাবস্থায় শান্ত ও সমাহিত।

 কোট্টাম সাহেবের প্রসঙ্গে শক্তির এই তথ্যটুকুর কথাই আমার বার বার মনে হইত এবং এখনও লিখিতে গিয়া আবার মনে পড়িতেছে। লোকটি অত্যন্ত নার্ভাস্ প্রকৃতির, অল্পেই বিচলিত হইয়া পড়া ছিল তাঁহার স্বভাব। তাই আমরা ভয়ে ভয়ে থাকিতাম যে ব্যাটা না জানি কখন কি কাণ্ড ঘটাইয়া বসে।

 কোট্টাম সাহেব যে কি প্রকৃতির মানুষ, তাহা তাঁহার আগমনের দিন কয়েকের মধ্যে টের পাওয়া গেল। দুর্গের পশ্চিম পাদমূল ঘেষিয়া যে ঝরণাটি প্রবাহিত

১৭৮