ছিল, তাহা হইতেই আমাদের স্নানাহার ইত্যাদির প্রয়োজনীয় জল সঞ্চয় করা হইত। একটা ইঞ্জিন ঘর ছিল, তাহার সাহায্যেই পাম্প করিয়া জল আনিয়া প্রকাণ্ড ট্যাঙ্কে মজুত করা হইত। ইঞ্জিন ঘরের মুখোমুখী ঝরণার অপর তীরে বকসার পোস্ট অফিস, মাঝখানে কাঠের একটা চওড়া পুল, দুর্গ হইতে এই পথেই বক্সা স্টেশনে যাইবার রাস্তা।
ভোরের দিকেই ইঞ্জিনটা বিগড়াইয়া গেল। ক্যাম্পে জলাভাব দেখা দিল। ভূটিয়া কুলীরা টিনে করিয়া জল আনিয়া রান্নাবান্নার প্রয়োজনটুকু নির্ব্বাহ করিয়া দিল। সমস্যা দেখা দিল স্নানের জলের। তিন চৌকার তিন ম্যানেজার চিঠি দিলেন যে, ঘণ্টা দুয়েকের জন্য খিড়কীর গেটটা খুলিয়া দেওয়া হউক, আমরা ঝরণার জলে স্নান সারিয়া আসি।
প্রস্তাবটা মোটেই অযৌক্তিক বা আদৌ নূতন ছিল না। একবার এই ঝরণাটা প্রায় শুকাইয়া আসিয়াছিল, পাম্পের সাহায্যে যে-জলটুকু পাওয়া যাইত, তাহা রান্নাবান্না ইত্যাদি গৃহস্থালীতেই ব্যয় হইয়া যাইত। তখন এই খিড়কীর দরজাটা ঘণ্টা কয়েকের জন্য খোলা হয়, আমরা দল বাঁধিয়া নীচের বড় ঝরণাটায় স্নানাবগাহন ক্রিয়া দিনকতক করিয়াছিলাম। কিন্তু কোট্টাম সাহেব তিন ম্যানেজারের চিঠির কোন প্রত্যুত্তরই দিলেন না।
ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘর পার হইল, সূর্য্যও আকাশের তুঙ্গে স্থির হইয়া তপ্তরৌদ্র বর্ষণ করিতেছিল। কাজেই বাবুদেরও মাথার তাপ সর্বোচ্চ পয়েণ্ট স্পর্শ করিয়া বসিল। আমরা অধিকাংশই বাঙাল, জলের দেশের মানুষ, আমাদিগকে জল ও স্থল উভচরই বলা চলিতে পারে। বর্ষার দুইটা মাস তো আমরা ঘরবাড়ী সমস্ত কিছু লইয়া জলেই ভাসমান জীবন যাপন করিয়া থাকি। স্নানটা আমাদের চাই-ই। তাপটা তাই আমাদের ব্রহ্মরন্ধ, ধর-ধর হইল, তার কিছু উত্তাপ অফিস পর্যন্ত পৌঁছিল।
সাহেব অবশেষে অর্ডার দিলেন, দশজনের এক একটি দল ছাড়া হইবে, তাহারা ফিরিয়া আসিলে আবার দশজন স্নানার্থে নির্গত হইবে। কিন্তু
১৭৯