বাহিরে থাকিতে কর্মের ঘানিতে ঘুরিয়া ঘর্ম ব্যয় করিতেই সময়টা খরচ হইয়া যাইত, জেলে আসিয়া প্রতিভা প্রয়োগের প্রচুর সময় এবার আমরা পাইয়া গেলাম। প্রকাশ্যে যাঁহারা সাহিত্যচর্চা করিতেন, খোঁজ লইলে দেখা যাইত যে, তাঁহাদের চেয়ে তুলনায় গুপ্ত-সাধকদের সংখ্যাটাই সমধিক ছিল।
যাঁহারা সাহিত্যিক বলিয়া ধরা পড়িয়া গিয়াছিলেন এবং তজ্জন্য কিঞ্চিৎ মাত্র লজ্জা বোধ করিতেন না, তাঁহারা প্রায়ই একত্রিত হইয়া আড্ডা জমাইতেন। শাস্ত্রেই আছে যে, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, অর্থাৎ গেঁজেল গেঁজেলকে চিনিয়া লয়। তারপর যাহা হয়, তার নাম গাঁজাখোরের আড্ডা।
তেমনি আড্ডা একদিন সন্ধ্যার সময় আমাদের সীটে বসিয়াছিল। পঞ্চাননবাবু ও আমার দুইজনের দুইখাট যুক্ত অবস্থাতেই থাকিত, কারণ তাসের নিয়মিত আড্ডার এটী ছিল স্থায়ী আসর।
সেদিন আসরে উপস্থিত ছিলেন অতীন রায়, সুরপতি চক্রবর্তী, সন্তোষ গাঙ্গুলী, নলিনী বসু, প্রমথ ভৌমিক এবং আমরা তিন বন্ধু—কালীপদ, পঞ্চাদা ও আমি। সিগারেট ও চায়ের সাহায্যে অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের মস্তকগুলির মধ্যে প্রেরণা পাক দিয়া উঠিল এবং হৃদয়ে উৎসাহ গা মোড়ামুড়ি দিয়া জাগ্রত হইল।
এক সময়ে কে একজন প্রস্তাব করিলেন যে, এভাবে সময় নষ্ট করা আমাদের অকর্তব্য।
আমরা মাথা নাড়িয়া অভিমতটা সমর্থন করিলাম। প্রস্তাবক অতঃপর বলিলেন যে, আমাদের আটজনে মিলিয়া একটি উপন্যাস রচনা করা কর্তব্য।
নলিনী বসু সঙ্গে সঙ্গে অ-জাত উপন্যাসের নামকরণ করিলেন, “নামটা হবে অষ্টবজ্র।”
১৯৭