পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিরা চিন্তাকুল ও গম্ভীর হইয়া অপেক্ষা করিতেছেন। অনুমান করিলাম, ব্যাপার নিশ্চয় গুরুতর।

 ব্যাপারটা এক কথায় এই যে, বাংলার সমস্ত বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব করিবার অধিকার যুগান্তর ও অনুশীলন পার্টির নাই, ইহা তাঁহাদের একচেটিয়া অধিকার নহে। যুগান্তর ও অনুশীলন-পার্টির বাহিরে আরও একটি শক্তিশালী দল ছিল। এই দলটিকে নাম দেওয়া হইয়াছিল “রিভোল্ট পার্টি,” পূর্বোক্ত দুই দলেরই চরমপন্থীগণ মিলিত হইয়া এই দল গঠন করিয়াছিলেন। এই দলের বক্তব্য না জানিয়া গেলে সেনগুপ্তের দায়িত্ব অসম্পূর্ণই থাকিয়া যাইবে। এই গোপন বৈঠকে তাই প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে যে, এই অবস্থায় কিংকর্তব্যং।

 প্রতুলবাবু (ভট্টাচার্য), বিনয়বাবু, যতীনদা একে একে সকলেই স্ব স্ব বক্তব্য পেশ করিলেন। সকল বক্তব্যেই একটা জ্বালা ও অপমানবোধ ব্যক্ত হইল। হইবার কারণও ছিল। যাঁহাদের লইয়া এই দল গঠিত হইয়াছে, তাঁহারা কেহই বাংলার বিপ্লবের ক্ষেত্রে নগণ্য বা তুচ্ছ ছিলেন না। তাঁহাদের বাদ দিয়া এই যে সাক্ষাৎকার, ইহাকে শিবহীন যজ্ঞ আখ্যা দেওয়া খুব বেশী অত্যুক্তি হইত না।

 প্রতুলবাবু আমাকে প্রশ্ন করিলেন, “কি করা যায় বলুন?”

 উত্তর দিলাম, “অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু আপনারা কি চান?”

 শুনিয়া প্রতুলবাবু আমার দিকে এমনভাবে তাকাইলেন যে, আমি যেন একটা গর্হিত প্রশ্নই করিয়াছি, অথবা নিতান্ত বোকার মতই একটা অদ্ভুত প্রশ্ন আমি জিজ্ঞাসা করিয়া বসিয়াছি।

 সংকট হইতে আমিই উদ্ধার করিলাম, কহিলাম, “সেনগুপ্তের সঙ্গে আপনারাও দেখা করতে চান, এই তো?”

 সকলের পক্ষ হইতে প্রতুলবাবু মাথা নাড়িয়া সায় দিলেন। বুঝিলাম আমি ইঁহাদের মনের ইচ্ছাটি অনুমান করিতে সক্ষম হইয়াছি।

 কহিলাম, “কাগজ কলম নিন, একটা চিঠি লিখুন।”

২১৩