কয়েকটি ক্ষণের জন্য সেদিন আমিও ধ্যানস্থ হইয়া পড়িয়াছিলাম, একথা বলিলে খুব জোর দিয়া যে প্রতিবাদ করিতে পারিব, মনে হয় না। তাই শরৎবাবুর সান্নিধ্য সম্বন্ধে আমি সচেতন হই নাই।
তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন—“ওটা কি?” বলিয়া চোখ ও আঙ্গুল দিয়া ওটার দিকে নির্দেশ করিলেন।
আমি কিন্তু ইঙ্গিত অনুসরণ করিয়া শুধু অনন্ত শিখরশ্রেণীই দেখিতে পাইলাম, কোন ওটার সাক্ষাৎ পাইলাম না।
কহিলাম—“কোনটা?”
—“ঐ যে চূড়াটা, আয়নার মত যা ঝক্ঝক্ করছে।”
নিজের বুদ্ধিমত উত্তর দিলাম—“ও চূড়াটা বরফে ঢাকা, রৌদ্র পড়ে ঝিক্মিক্ করছে।”
এক সিপাই বলিল— “ওই তো কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া।”
—“কাঞ্চনজঙ্ঘা? এখান থেকে দেখা যায়?”
হ্যাঁ, যায়। সিপাইজী এই পথে আরও কয়েকবার নাকি যাতায়াত করিয়াছে, কাজেই সে জানে। পরের ষ্টেশনে খোঁজ লইয়া জানিলাম যে, সিপাহী ঠিকই বলিয়াছে, আমাদিগকে গ্রাম্য পাইয়া হাইকোর্ট দেখায় নাই।
কিন্তু এর নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা কেন? যেভাবে জ্বলিতেছে, তাতে সোনার রং তো মোটেই নাই। বরং এর এই রজতকান্তি দেখিয়া এর নামকরণ হওয়া উচিত ছিল—রজতজঙ্ঘা।
আবার ভাবিয়া সংশোধন করিলাম যে, ভোরের প্রথম আলো যখন এর বরফের চূড়া স্পর্শ করে, তখন নিশ্চয় এর সারাদেহ সোনায় ঝল্মল্ করিয়া উঠে। সে সময়ে এর কনককান্তি দেখিয়াই বোধ হয় এর নামকরণ হইয়া থাকিবে—কাঞ্চনজঙ্ঘা।
বেশ, তাহাই নয় মানিয়া নিলাম। কিন্তু জঙ্ঘা কেন? এতো জঙ্ঘা নয়, এযে শিখরচূড়া। যেমন বলা হয় গৌরীশৃঙ্গ, তেমনি হওয়া উচিত ছিল— কাঞ্চনশৃঙ্গ বা কাঞ্চন-শিখর। আজও আমি বুঝিতে পারিলাম না যে, কি কারণে
২৪