পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ষ্টেশনের নামটায় আমাদের দৃষ্টি আটকাইয়া গেল—রাজাভাতখাওয়া! কোন রাজার ভাত খাওয়ার সঙ্গে ইহার যোগ আছে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। নামের মধ্যেই ষ্টেশনটির পরিচয় নিহিত আছে। রাজা হীরা-মুক্তা-সোনা-দানা না খাইয়া আমাদের মত সামান্য মনুষ্যেরা যে ভাত খাইয়া থাকে, সেই ভাতই ভক্ষণ করিয়াছেন, এই অসামান্য কীর্তিকেই বোধ হয় এই নামকরণে স্থায়িত্ব দিয়া স্মরণীয় করিয়া রাখার চেষ্টা হইয়াছে! এইটুকু পর্যন্ত চোখ বুজিয়াই অনুমান করিয়া লইলাম।

 আমার এ অনুমান কিম্বদন্তী দ্বারাও সমর্থিত হইল। স্থানীয় একজনের নিকট ইতিহাসের তথ্য পাইয়া গেলাম। পুরাকালে—সেকালের সনটা বক্তাও বলিতে পারেন নাই, কুচবিহারের কোন রাজার সঙ্গে ভূটানের রাজার লড়াই লাগিয়াছিল। রাজায় রাজায় লড়াই লাগিয়াই থাকে, মান্ধাতার আমল হইতে রাজা মাত্রেই এই নিয়ম নিষ্ঠার সহিত পালন করিয়া আসিয়াছেন। সুতরাং কোচবংশের সহিত ভোট বংশের লড়াই ঐতিহাসিক ঘটনা বলিয়াই গ্রহণ করিতে আমরা ন্যায়তঃ বাধ্য। কুচবিহারের রাজা ভূটানের রাজাকে যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া অর্থাৎ আচ্ছা শিক্ষা দিয়া ফিরিবার পথে পাহাড় হইতে নামিয়া সসৈন্যে এখানে ছাউনী ফেলিয়া তবে অন্নগ্রহণ করিয়াছিলেন।

 দেশের মাটীতে পা দিয়া কেবল ভাত খাইয়াই তিনি প্রথম বিজয়োৎসব সম্পন্ন করেন, এ খবর শুনিয়া আমার মন ভক্তিতে ও শ্রদ্ধায় আপ্লুত হইল। এতদিনে একজন খাঁটি বাঙালীর পরিচয় পাইলাম, যিনি ভেতো নামটাকে গর্বের ও বিজয়ের জিনিস মনে করিতে ভয় পান নাই বা দ্বিধা করেন নাই। ভাতকে যিনি এত বড় সম্মান দিতে পারিয়াছিলেন, তিনি সমস্ত বাঙালী জাতিরই নমস্য, এক কথায় তিনি প্রাতঃস্মরণীয়।

 তাঁর আত্মত্যাগও তুচ্ছ করিবার নহে। শুধু মোগল-পাঠান আমলেই নহে, এ আমলেও বড় বড় লোকেরা নিজের নামটা গ্রামের বা নগরের কপালে লটকাইয়া দিয়া থাকেন—যেমন লেনিনগ্রাদ,

২৬