পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ষ্টালিনগ্রাদ ইত্যাদি। এই খাঁটি বাঙালী তাহা না করিয়া বাঙালীর প্রাণধারণের একমাত্র আহার যে ভাত খাওয়া, তার পূর্বে শুধু রাজা শব্দটি যোজনা করিয়াছেন। অশোকের শিলালিপির শিক্ষা ও অনুশাসনই শুধু উত্তরকালের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। কিন্তু রাজাভাতখাওয়ার মধ্যে যে কি তত্ত্ব লুক্কায়িত আছে, তাহা বাঙালী আমরা তাকাইয়াও দেখি না। রাজাভাতখাওয়া মানে—বাঙালী যেদিন ভাত খাইতে পাইত, সেদিন সে সত্যই রাজা ছিল। ভাতের অভাবে বাঙালীর কি ছিরি ও দুর্দশা হইয়াছে, তাহা আর কহতব্য নহে।

 তত্ত্বদৃষ্টি ত্যাগ করিয়া যখন খোলা দৃষ্টিতে রাজাভাতখাওয়ার দিকে তাকাইলাম, তখন দেখিতে পাইলাম যে, ষ্টেশনটি কাঠের গুদাম হইয়া রহিয়াছে। যতদূর মনে পড়ে, কয়েক ষ্টেশন আগে আলিপুর-ডুয়ার্সেও সারি সারি কাঠের স্তূপ ছোট ছোট পাহাড়ের মত মজুত রহিয়াছে দেখিয়াছিলাম। এযে চোরাই মাল এতে আর সন্দেহ রহিল না। নিকটের ঐ অরণ্য হইতে এ সব সংগৃহীত হইয়াছে। অরণ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী এ চৌর্যের তেমন কোন প্রতিবাদ করেন নাই বলাই বাহুল্য। সমুদ্র হইতে কয়েক কলস জল লইলেই রত্নাকরের সম্পত্তিতে হাত দেওয়া হয় মনে করিলে ভুল হইবে। বনলক্ষ্মীর ঐশ্বর্যের খুদকুড়োও মানুষ এতাবৎ অপহরণ করিয়া উঠিতে পারে নাই।

 বক্‌সা ষ্টেশনে যখন অবতীর্ণ হইলাম, তখন বেলা প্রায় গোটা দশেক। মহাসমুদ্রের মাঝখানে ছোট একটুখানি দ্বীপ যেমন, মহা অরণ্যের মাঝখানে এই ষ্টেশনটিও তেমনি।

 আমরা সিউড়ী জেলের নয়জন ছাড়া আরও পাঁচজন রাজবন্দী ট্রেন হইতে পুলিশের জিম্মায় অবতীর্ণ হইলেন দেখা গেল। ইঁহারা বগুড়া ও রংপুর জেল হইতে চালান হইয়া আসিয়াছেন। সর্বসাকুল্যে সংখ্যাটা এখন দাঁড়াইল চতুর্দশ।

 শরীরের ভাবগতিক ভালো দেখিলাম না। সিউড়ী হইতে কয়েকশত মাইল কলিকাতা, তারপর সেখান হইতে দীর্ঘপথ, অবশ্য গাড়ীতেই চড়িয়া আসিয়াছি,

২৭