পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গন্ধর্বপুরীতে মানে সেই ওয়েটিংরুমে খোলা দরজার পথে চোখ মেলিয়া দিয়া বসিয়াছিলাম। চোখ খোলা থাকিলে না দেখিয়া উপায় নাই, তাই অনেক কিছুই দেখিতে হইল। দেখিবার যে বিশেষ অনিচ্ছা ছিল, তাও নয়। রক্তমাংসের মানুষের দোষগুণ যা থাকিবার কথা, তা আমারও ছিল। সর্বোপরি ছিল গভীর বনের পটভূমিকা, ঐ আবেষ্টনে মনে ধীরে ধীরে মোহ বিছাইয়া দিতেছিল। ফলে মনের মার্জিত সংযত সভ্য দিকটা ঝিমাইয়া পড়িল, অথবা মনের গাত্র হইতে এতদিনের জানাশোনার আচ্ছাদনটা স্খলিত হইয়া পড়িল। বাহির হইয়া আসিল বনের আদিমতম অধিবাসীর বন্য নগ্ন রূপটি। বহু মৃত্যুর মধ্য দিয়া যে অরণ্যজীবন পার হইয়া আসিয়াছি, সেই অতীত কোথা হইতে উত্থিত হইয়া আমার বর্তমানকে গ্রাস করিয়া লইল, আমি মনে মনে এই গভীর অরণ্যানীরই অংশীভূত হইয়া গেলাম।

 সম্মুখে ছোট্ট প্লাটফর্মে মালপত্র নামানো ও কর্মব্যস্ততা চলিয়াছে। ভূটিয়া ললনারা কাজ করিতেছে, কথা বলিতেছে, হাসিতেছে—প্রাণচাঞ্চল্যের কোন অভাবই দেখিলাম না, বরং যেন একটু বেশিই দেখিলাম। লজ্জা-সংকোচ বলিয়া ব্যাপারটা যে এদের তেমন জানা আছে বলিয়া তো মনে হইল না। কিংবা জানা থাকিলেও অপ্রয়োজনীয় বোধে বহু আগেই পরিত্যক্ত হইয়াছে।

 সিপাইরা পুরুষ মানুষ, তায় ক্ষত্রিয় ব্যবসায় অবলম্বন করিয়াছে, এদের উপর তাদেরই স্বাভাবিক অধিকার থাকার কথা। ক্ষত্রিয়রা শুধু ত্রাণই করিয়াছে তা নয়, সসাগরা বসুন্ধরা ভোগও তারাই করিয়াছে। কাজেই পৌরুষ তাদের চঞ্চল হইয়া উঠিতে ন্যায়তঃ ও স্বভাবতঃ বাধ্য এবং হইয়াও যে উঠিয়াছে, টের পাইলাম। সিপাইদের মধ্যে কারো কারো ভাবভঙ্গী ঠিক রুচিসংগত হইতেছিল বলা চলে না। ভূটিয়া মেয়েরাও হাবভাবে এই পৌরুষে ইন্ধন নিক্ষেপ করিতে ত্রুটি করিতেছিলনা। এ-খেলার ছলা-কলা কৌশল সবকয়টি ইহারাও বেশ আয়ত্ত করিয়া লইয়াছে দেখিলাম।

৩০