আরও খানিকটা দেখিলাম। এই দেখাটির জন্য সত্যই প্রস্তুত ছিলাম না।
স্টেশন হইতে হাত ত্রিশেক দূরে স্টেশন মাস্টারের ঘর। মোটা খুঁটির উপর হাত দশেক উঁচু মঞ্চ, তদুপরি ঘরখানা দাঁড়াইয়া আছে, অতিশয় দৃঢ় ও সুরক্ষিত। বাঘ, ভাল্লুক, হাতী আসিয়া বড় জোর তর্জন-গর্জন করিয়া যাইতে পারে, গা দিয়া শুড় দিয়া ঠেলিয়া খুঁটির জোর পরীক্ষা করিতে পারে, কিন্তু গৃহের বা গৃহবাসীর কোন ক্ষতিই করিতে সক্ষম হইবে না—এমন করিয়াই এই ঘনজঙ্গলের মধ্যে গৃহটি তৈরী করা হইয়াছে।
মাটি ও ঘরের মঞ্চের মধ্যে প্রচুর ব্যবধান, একটা আস্ত হাতী গিয়াও দাঁড়াইতে পারে। দরজার দিক হইতে দৃষ্টিটাকে ফিরাইয়া জানালার পথে উক্ত গৃহটির অভিমুখে প্রেরণ করিলাম। দৃষ্টি সেখানে পৌঁছিয়াই থমকিয়া দাড়াইল। একজোড়া ভূটিয়া ছেলে ও মেয়ে পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় অবস্থান করিতেছে।
আলিঙ্গনমুক্ত করিয়া প্রেমিকযুগল নিশ্চয় বহুক্ষণ পূর্বেই স্টেশনে ফিরিয়াছে। চোখ বুজিয়া হাতলভাঙ্গা ডেকচেয়ারটায় পড়িয়াছিলাম। কতক্ষণ পার হইয়াছে, খেয়াল ছিল না। এই অবস্থায় মনে একটি ব্যাপার ঘটিয়া গেল, যার জন্য মোটেই প্রস্তুত ত ছিলাম না বটেই, কিন্তু এমন যে ঘটিতে পারে তাহাই আমার স্বপ্নেরও অভিজ্ঞতায় ছিল না। কয়েকটা সেকেণ্ড, বড় জোর একটি মিনিট সময় লাগিয়াছিল এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটিতে।
চোখ বুজিয়। পড়িয়াছিলাম। হঠাৎ সচেতন হইলাম যে, আমার মনে আসন্ন কিছুর ছায়া পড়িয়াছে। মন ধীরে ধীরে কোথায় গভীরে যেন নামিয়া যাইতেছে, এও টের পাইলাম। পরক্ষণেই টের পাইলাম যে, পরিচিত জগতের সঙ্গে আমার এতদিনের সম্পর্ক ছিন্ন হইয়া গেল! ঠিক ছিন্ন হওয়া নয়, পরিচিত জগৎ যেন কোথায় অদৃশ্য হইল। অথচ, বুদ্ধি আমার তখনও পূর্ণ জাগ্রত।
৩১