আমার সম্মুখে যাহা আসিল, তাহা হঠাৎ আসিল বলিয়াই আমার চেতনায় ধাক্কা লাগিয়াছিল। আমি জানিতে পারিলাম যে, আমি এমন একটি লোকে আসিয়াছি, যে-লোকের অস্তিত্ব সম্বন্ধেই এতাবৎ আমার কোন ধারণা ছিল না।
এই লোকটি আমাদের জগতের মধ্যেই অবস্থিত, অথচ জগৎ তাকে এমন আড়াল করিয়া রাখিয়াছে যে, এর অস্তিত্বের খবরই আমরা জানি না। হঠাৎ কি কারণে মন এই লোকে পা দিয়া বসিল, আমি জানি না। হয়তো দৃষ্টি হইতে আচ্ছাদন একটি ক্ষণের জন্য অপসারিত হইয়া থাকিবে। একটি ক্ষণের বিদ্যুতালোকেই এই অজ্ঞাত লোকটি আমার চোখে উদ্ভাসিত হইল। ইহাকে কি নামে বুঝাইব, বুঝিতেছি না। কে জানে, হয়তো ইহাই—কামলোক।
একটি ক্ষণ, কিন্তু তাতেই আমার দেখা সম্পূর্ণ হইয়াছিল। আমাদের জগতের দেশকালের কোন সীমা সেখানে নাই। প্রাণের অন্তরালে অন্তহীন কাম-জগৎ অবস্থিত, যেখান হইতে সামান্য বুদ্বুদের মত কিছু উপরে ভাসিয়া উঠিলেই আমাদের প্রাণ-জগতে সমস্ত কামকেন্দ্রগুলিতে অল্পবিস্তর চাঞ্চল্য সঞ্চারিত হইতে থাকে। এখানকার সামান্য নিঃশ্বাসেই আমাদের এই উপরের জগতে প্রবৃত্তির ঝড় দেখা দেয়। এ-লোকের বর্ণনা চলে না, শুধু দেখা চলে। কিন্তু মনের সে-চোখ হঠাৎ না খুলিলে দেখার পথ কেহই বলিয়া দিতে পারিবে না।
তেমনি হঠাৎ চোখ আবার ক্ষণপরেই বন্ধ হইয়া গেল, নিজের পরিচিত জগতে মন ধীরে ধীরে উঠিয়া আসিতে লাগিল। যাহা দেখিলাম, তাহার স্মৃতিতে মন আমার তখনও আচ্ছন্ন-আবিষ্ট হইয়া আছে। চোখ খুলিলাম, কিন্তু চোখে তখনও মায়া লাগিয়াছিল, সমস্ত বনভূমি আমার নিকট কামভূমি বলিয়া প্রতিভাসিত হইল।
চোখ খুলিয়া রাখিতে ইচ্ছা হইতেছিল না, চোখ বুজিয়াই পড়িয়া রহিলাম। ছবির পর ছবি আসিতে ও যাইতে লাগিল। ইচ্ছা করিয়া
৩২