এত সহজে মানিয়া লইতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। কহিলাম—“কেন কাটাতে হবে? ঘোড়া ডাণ্ডী আসবার বাধাটা কি?”
শরৎবাবুও হটিবার পাত্র ছিলেন না, মুখের উপর জবাব দিলেন—“কেন আসবে শুনি? জীবনের মায়া নেই?”
জবাব নয়, যেন চপেটাঘাত। একেবারে বোবা হইয়া গেলাম। জীবনের মায়া আছে কি নাই, এ কি একটা জিজ্ঞাসা করার মত প্রশ্ন হইল! আমাদের জীবনে থাকার মধ্যে তো একমাত্র জীবনের মায়াটাই আছে। এ কে না জানে! নম্র হইযা পড়িলাম। তখন শরৎবাবুর কাছে আরও খানিকটা তথ্য পাইয়া গেলাম।
ফোর্টে গিয়া এই দল যখন পৌঁছিবে, তখন আর ঘোড়া বা ডাণ্ডী পাঠাইবার সময় থাকিবে না। শীতকাল, একটু আগেই দিন শেষ হয়, সূর্যাস্তের বহু পূর্বেই এ প্রদেশে অন্ধকার নামে। দিনের আলো থাকিতে থাকিতেই এই বনের ও পাহাড়ের পথে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ হইয়া যায়। জানোয়ারের হাতে প্রাণ হারাইতে যাদের আপত্তি নাই, তারা তখন এ পথে চলিলেও চলিতে পারে। সে রকম লোক খুব বেশি আছে বলিয়া মনে করিবার কোন কারণ নাই। থাকিলেও ঘোড়ার সহিস বা ডাণ্ডীবাহকদের মধ্যে যে নাই, তা না দেখিয়াই ধরিয়া নেওয়া যাইতে পারে।
তাছাড়া, ধরিয়াই নয় নিলাম যে, ঘোড়া ও ডাণ্ডী সন্ধ্যার কাছাকাছি স্টেশনে কোনরকমে সত্যই আসিয়া হাজির হইল। কিন্তু তখন যাইবে কে? আমরা? কেন, বিপ্লবী স্বদেশী হইয়াছি বলিয়া কি এমনই অপরাধ করিয়াছি যে, আমাদের জীবনের মায়া থাকিতে নাই?
সমস্যাই শেষে দেখা দিল। শরীর ক্লান্ত বোধ করিতেছিলাম। এখন এই লম্বা পথটা নিজের পায়ের উপর নির্ভর করিয়া চড়াই-উৎরাই করিয়া পাহাড়ের মাথায় ফোর্টে গিয়া উপস্থিত হইতে হইবে, ছবিটা একটুও আরামপ্রদ
৩৭