পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নয় দেখিয়া অবস্থা বুঝিয়া নিজের ব্যবস্থা করিয়া সরিয়া পড়িয়াছেন। নিঃসঙ্কোচ মূর্তিমান স্বার্থটিকে দেখিবার একটা অদম্য ইচ্ছা মনে জাগ্রত হইল। ঘোড়ার যদি তার সত্যিকার প্রয়োজনই থাকিত, তবে অন্যান্য বন্ধুদের উপর অনায়াসে তিনি নির্ভর করিতে পারিতেন, কেহই তাঁকে ঘোড়া হইতে বঞ্চিত করিত না। ভয় ও স্বার্থ´ তাঁকে সেটুকু ধৈর্য বা অপেক্ষা করিবার শক্তি দেয় নাই। লোকটির উপর একটা বিজাতীয় ঘৃণাই জন্মিয়া গেল। পরে জানিয়াছিলাম যে, তিনি কটিবাত ও হাটুবাতের রোগী ছিলেন, ঘোড়া দেখিয়াই তিনি খোঁড়া হন নাই।

 কাপড়ের কোঁঁচা দুই পায়ের মধ্য দিয়া গলাইয়া মল্লকচ্ছ মারিয়া মল্ল সাজিলাম, কাঁধের র‍্যাপারটাকে নামাইয়া কসিয়া কোমরবন্ধ করিলাম এবং পাঞ্জাবীর আস্তিনটা গুটাইরা কনুই অবধি মুক্ত রাখিলাম। এখন ‘হর-হর বম্-বম্’ বলিয়া পা চালাইলেই হয়।

 শরৎবাবু ও আমি দুই পদাতিক পথে নামিরা পড়িলাম। আগে এক ঘোড়সোয়ার গিয়াছেন, তাকে অর্থাৎ ছ-নম্বরের অশ্বারোহীকে গিয়া ধরা চাই। গভীর বনের মধ্যেই ছিলাম, কিছুক্ষণের মধ্যে গভীরতর বনের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম।

 বনের ও পাহাড়ের পথে দুইজনে পাশাপাশি চলিয়াছি। দুই পাশে গভীর অরণ্য, ঝিঁঝি ও পতঙ্গের একটানা শব্দে বনভূমির নিস্তব্ধতাকে গাঢ়তর করিয়া তুলিতেছে। জনমানবের চিহ্ন নাই, বন্যশ্বাপদেরা দূর বনে ও গুহায় রাত্রির অপেক্ষা করিয়া দিনমান আলস্য-বিশ্রামে কাটাইতেছে— পথ চলিতে চলিতে আমার এতদিনের পরিচিত মন বদলাইয়া গেল।

 প্রাণের এক বলিষ্ঠ রূপ দেখিলাম নিজের মধ্যে। একদিন এই অরণ্য জগতে বনস্পতি হইয়া একপায়ে দাঁড়াইয়া ঊর্ধ্বে মাথা তুলিয়া আকাশের আলোর তপস্যা করিয়াছি, শাখা-পল্লবের করপুট ভরিয়া রৌদ্ররস পান করিয়াছি, আর মাটির গভীরে শত শিকড়ের মুখে ধরণীর রসস্তন্য প্রবল

৪১