পলকহীন। পৃথিবীতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য যাদেরই পায়ে শিকল পরানো হইয়াছে, আমার পায়ে আজ সেই সকলের শিকল-বন্ধনের শব্দ শুনিতেছি। আমি জগতের সমস্ত বিদ্রোহী মানবাত্মার প্রতিনিধি।
বনের মধ্যে তাই আমি সিংহের মত আজ একাকী গহনচারী। আমি যেদিন দিনের আলোকে লোকালয়ে বাহির হইব, সেদিন মানব-সমাজের মুক্তির দিন। ভিতরের বিদ্রোহীর মৌন-ভঙ্গের দিন সেটি।”
আঠারো বছর পরে আজ দেখিতেছি যে, সে-বিদ্রোহীর মৌন-ভঙ্গ তো দূরের কথা, সে-বিদ্রোহীই বুকের কোন প্রত্যন্ত দেশে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করিয়া অদৃশ্য হইয়াছে। আমাকে দিয়া এ মহা-বিদ্রোহীর স্বপ্ন সার্থক হয় নাই এবং হইবে না, ইহা আমি জানি। আর ইহাও জানি যে, এই বিদ্রোহী একদিন সত্যিকারের বীরের তনুতে তনু গ্রহণ করিবেন। সেদিন প্রলয়ঙ্কর শঙ্কর ও দক্ষিণমুখ শিব সেই বীরের মধ্যে একাধারে শিব-শঙ্করের মূর্তিতে দেখা দিবেন। ভারতবর্ষের ভবিষ্য ইতিহাসের তিনিই চালক ও নেতা, ধারক ও বাহক। নব মহাভারতের তিনিই নব মহাবীর।
এই অরণ্যপথ-যাত্রার আর একটি ছবিও দেখিতেছি সেদিনের ডায়েরীতে লেখা আছে। এটুকুও উদ্ধৃত করিবার লোভ সম্বরণ নাই বা করিলাম—
“বনের মধ্যে কিছুদুর আসিয়া একটি গাছ দেখিয়াছিলাম। গাছটি আমার কাছে শক্তির একটি প্রতীক হইয়া আছে। প্রকাণ্ড গাছ, আশেপাশের কোন গাছই এরকম মোটা বা দীর্ঘ নয়। গাছটার মাথাটা নাই। মনে হয়, মাথাটা ডালাপালা সমেত কেহ মোচড়াইয়া ছিঁড়িয়া লইয়াছে। এখনও কাণ্ডটি যে-দৈর্ঘ্য লইয়া খাড়া আছে, তাহাও কম নহে। হয়তো ঝড়ের সঙ্গে সমস্ত বনের পক্ষ হইয়া এ লড়াই করিয়াছিল। একে ভূমিশায়ী করিবার জন্য ঝড় যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছে, কিন্তু তবু উন্মূল করিয়া ভূমিশয্যা লওয়াইতে পারে নাই—এক পায়ে এক স্থানে দাঁড়াইয়াই বনের ধীর বনস্পতি ঝটিকার সঙ্গে সংগ্রাম চালাইয়াছে।
অবশেষে আকাশের কালো মেঘ হইতে বজ্র বাহির হইয়া আসিয়াছে। অটল
৪৩