পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 থামিবার যো ছিল না, বলিতে বলিতে প্রায় হাত দশেক নীচে নামিয়া গিয়াছিল।

 শরৎবাবু বলিলেন—“শালার কথা শোন! আমার যাচ্ছে প্রাণ বেরিয়ে, আর উনি এলেন খানাপিনার ব্যাখ্যান করতে। দেয় ধাক্কা মেরে খাদে ফেলে।”

 সত্যি একখানা ভারী পাথর এখান হইতে গড়াইয়া ছাড়িয়া দিলেই হয়, তারপব ব্যস্, ঐ পাঁচ ছ’শো হাত গভীর খাদে জন্মের মত ঠাণ্ডা হইয়া থাকিবে।—এ পথে মৃত্যু এতই সুলভ।

 খানিকক্ষণ যাবৎ কি রকম একটা শব্দ কানে আসিতেছিল, কোথায় যেন কে ভয়ানক গর্জন করিতেছে।

 একটা পুলের কাছে আসিয়া গেলাম, নিম্ন দিয়া একটা ঝরণা চলিয়াছে। যেমন বেগ, তেমনি গর্জন, আশেপাশের সমস্ত পাহাড় প্রতিব্বনিত হইতেছে! কিসের সঙ্গে এই দুর্দান্ত পর্বতদুহিতার তুলনা করিব, ঠিক পাইতেছিলাম না। তুলনার চেষ্টা ছাড়িয়া দিলাম,—একটা লোভ ক্ষণিকের জন্য মনের আকাশে ঝিলিক দিয়া মিলাইয়া গেল।

 আচ্ছা, এ রকম কোন মেয়ে পাওয়া যায় না, যার মধ্যে এই পার্বত্য স্রোতস্বতীর মানবী প্রতিমূর্তি দেখা যাইবে— এমনই প্রাণবেগ, এমনই পাথরটলানো দুর্দমনীন গতি, এমনই অফুরন্ত উদ্বেল প্রাচুর্য! কিন্তু পাহাড়ের মত মানুষ কোথায়, তেমন মেয়ে পাওয়ার যার অধিকার আছে—স্থির অচঞ্চল থাকিয়া এ প্রাণ-প্রবাহকে যে বুকে ধরিতে পারে? জানি, নাই। তবু তো মানুষ লোভ করিতে পশ্চাদপদ হয় না। লোভ করিবার শক্তি আছে, অথচ পাইবার অধিকার নাই, একী অদ্ভুত অসহনীয় নিয়ম!

 শরৎবাবু বাঁচিয়া গেলেন। ঝরণার জলে পা ডুবাইয়া, মুখ ধুইয়া, ঘাড়ে ও মাথার পিছনটার জল দিয়া তিনি চাঙ্গা হইয়া উঠিলেন। এমন কি তিনি বলিয়া ফেলিলেন—“আঃ, শরীর জুড়িয়ে গেল। আর কোন ক্লান্তি নেই—”

৫৩