বন্ধুরা ঠেলিয়া-ঠুলিয়া এই আড়াইমণি মাল ঘোড়ার পিঠে উঠাইয়া দিলেন। ঘোড়া আগাইয়া চলিল। পিছন হইতে বন্ধুদের হাসির শব্দ শুনিয়া অশ্বারোহী ঘাড় ফিরাইলেন, কিন্তু হাসির কারণটা অনুধাবন করিতে পারিলেন না।
পরে ঘাড় ফিরাইয়া সম্মুখে চাহিয়াই ব্যাপারটা বুঝিতে পারিলেন। তিনি ঘোড়ায় চড়িয়া বসিয়া আছেন, আর সামনে থাকিয়া দড়ি ধরিয়া একটা ভূটিয়া ছেলে জীবটিকে আগাইয়া লইয়া যাইতেছিল—এই দৃশ্যটাই বন্ধুদের হাসির হেতু।
বীরেনবাবু চটিয়া ছেলেটাকে একটা ধমক দিলেন—“এই উল্লুক, দড়ি ছেড়ে দে বলছি। আমাকে পেয়েছিস কি শুনি?”
ছেলেটা ভয়ে দড়িটা খুলিয়া লইল।
বীরেনবাবু দুই হাতে লাগাম ধরিয়া দুই হাঁটুতে ঘোড়াটার কুক্ষিদেশে কষিয়া দুই গুঁতা দিলেন, অর্থাৎ ঘোড়াকে ঘোড়ার মত চলিবার নির্দেশ দিলেন। ঘোড়া এ আদেশ পালন করিল।
পিছন হইতে বন্ধুরা উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে চীৎকার করিলেন,—‘বীরেনদা, নেমে পড়ুন, নেমে পড়ুন।”
বীরেনবাবু নামিলেন না, কারণ তাঁর নামিবার মতন অবস্থা নয়।
তিনিও উত্তর দিলেন,—“খামাকা কেন পরিশ্রম করতে যাই, ভালো বুঝলে ওই নামিয়ে দেবে।”
তাহাই হইল। ঘোড়াটা ভালোই বুঝিল, ফলে বীরেনবাবু ধাবমান অশ্ব হইতে পথের উপর ছিটকাইয়া গিয়া পড়িলেন।
তখনও পাহাড়ী পথ শুরু হয় নাই, বনের পথের ধূলা সর্বাঙ্গে মাখিয়া বীরেনবাবু উঠিয়া দাঁড়াইলেন। জামা-কাপড় ঝাড়িবার চেষ্টাও করিলেন না। বন্ধুরা দৌড়াইয়া আসিলেন এবং একসঙ্গে অনেকের হাত লাগিয়া গেল, ধূলা মার্জনা করিয়া বীরেনবাবুকে চলনসই করিতে।
৫৮