একজন প্রশ্ন করিলেন,—“লাগেনি তো?”
বীরেনবাবু উত্তর করিলেন,—“লাগবে? কেমন কায়দার উপর নাবলাম দেখলেন না!”
আবার বিস্মিত প্রশ্ন হইল,—“নাবলেন কোথায়? আপনি তো ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়লেন।”
বীরেনবাবু প্রতিবাদ করিলেন,
—“না পড়িনি, ঘোড়াই ফুরিয়ে গেল।”
উত্তর শুনিয়া বন্ধুরা হাসিয়া উঠিলেন।
ঘটনাস্থল বনের পথ বলিয়া তাঁহারা হাসিতে পারিয়াছিলেন। কিন্তু দারোগাবাবু যেখানে আমাকে ঘোড়ার পিঠে অর্থাৎ হাতে সমর্পণ করিতে চাহিয়াছিলেন, সেখানে এ সব হাসিই শোকের কান্না হইয়া যাইত। ধাবন্ত ঘোড়ার পিঠে আসন টলিতে টলিতে অবশেষে পুচ্ছের উপর দিয়া পিছলাইয়া আরোহীর পতন ঘটিলে, সে-পতন পথের উপরই শেষ হইত না, আরও খানিকটা, এই পাঁচ ছ’শত হাত, গড়াইয়া নীচে ঐ খাদে গিয়া তবে সে পতন থামিতে পারিত।
ভাবিতেও গায়ে কণ্টক দেয়। যাক্, বুদ্ধির জোরে বাঁচিয়া গিয়াছি, বুদ্ধি করিয়াই তো ঘোড়া প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলাম। ও তো ঘোড়া প্রত্যাখ্যান নহে, আসলে মৃত্যুকেই ফিরাইয়া দিয়াছি। অত বড় বুদ্ধিমান চাণক্য ব্রাহ্মণ, তিনি কি আর না জানিয়াই বলিয়াছিলেন যে, শত হস্তেন বাজিনা। বাজিনার স্থলে অনেকে পাজিনা বলিয়া থাকেন, তাতেও অর্থের অসঙ্গতি হয় না। বরং চাণক্যের তালিকাটি আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত হইবার সুযোগ পায়।
এত বুদ্ধি সত্ত্বেও কিন্তু একটা ক্ষোভ মনে তখন জাগিয়াছিল যে, যদি ঘোড়ায় চড়িতে জানিতাম। ঘোড়ায় চড়িতে পারি না, এটাকে আমি অক্ষমতা বলিয়াই মনে করি। এমন কি পৌরুষ যেন এই ত্রুটিতে একটু
৫৯