পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নীচে বাথরুমে তখন বেশ ভীড়। যিনি একবার প্রবেশ করেন, সহজে বাহির হইতে চান না; দাঁতন, মুখ প্রক্ষালন ইত্যাদির ফাঁকে সঙ্গীত-চর্চাও অনেকেই করিতেছিলেন। বরাবর দেখিয়াছি বাথরুমেই আমাদের গানের গলা বেশ খুলিয়া যায়, বিশেষ করিয়া শীতকালে। ভূটিয়া কুলীরা পিঠে দুধের টিন, মাছ, আলুর বস্তা ইত্যাদি লইয়া দুর্গের পশ্চিম খিড়কীর দরজার পথে বাথরুমের গা ঘেঁষিয়া উপরে উঠিয়া আসিতেছে, রান্নাঘরের সামনে মাল নামাইয়া রাখিতেছে, বাবুরাও দাঁতন হাতে টাওয়েল কাঁধে আশেপাশে ঘুরিতেছেন। প্রাকৃতিক দৃশ্যে যাদের রুচি ও আকর্ষণ তাঁরা রান্নাঘরকে বাঁয়ে ও বাথরুমকে ডাইনে রক্ষা করিয়া আরও একটু দক্ষিণে নামিয়া গিয়া এবং ছ’নম্বর ব্যারাককে আরও নীচে সম্মুখভাগে রক্ষা করিয়া দৃষ্টির লাগাম ছাড়িয়া দিয়া দণ্ডায়মান আছেন —সম্মুখে বাঙলারই সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তর। কিন্তু প্রান্তর বলিয়া বুঝিবার উপায় নাই। দীর্ঘ বন ও তার কিনারা হইতে শুরু হওয়া বিস্তৃত ভূভাগ কি এক রকম রংয়ে একাকার হইয়া গিয়াছে। এমনকি দুরের চা-বাগানের বাড়িগুলি পর্যন্ত ঐ রংয়ে ডুব মারিয়া নিশ্চিহ্ণ হইয়াছে। সমস্তটা ছবির উপর প্রগাঢ় একটা নীলের ছোপ লাগিয়াছে।

 বীরেনদা (চাটার্জি) কিছুক্ষণ ভূটিয়াদের সঙ্গে তাঁর স্বরচিত ভূটিয়া ভাষায় অনর্গল আলাপে ভূটিয়া বাহিনীকে অবাক ও বাবু বাহিনীকে হাস্যমুখর করিয়া সবেমাত্র সেখানে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন। তাঁর পাশে আসিয়া দাঁড়াইল চট্টগ্রামের অল্পবয়স্ক একটি ছেলে, নাম শশাঙ্ক। গতকালই তারা ক্যাম্পে আসিয়াছে। এই তাদের বক্‌সাতে প্রথম ভোর।

 বীরেনদা শশাঙ্কের দিকে চাহিয়া গম্ভীর কণ্ঠে কহিলেন—“বে অফ বেঙ্গল।”

 ছেলেটি বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি বল্লেন?”

 —“বঙ্গোপসাগর দেখা যাচ্ছে।”

 —“বঙ্গোপসাগর? এখান থেকে?”

৬৫