শরৎবাবু দার্শনিক ঔদাসীন্যে জবাব দিলেন— “শালগ্রামের আবার শোয়া-বসা।” অর্থাৎ, আমাদের আবার ব্যাপার অব্যাপার কি, সর্বাবস্থাই সমান।
—“যিনি গেলেন তাঁকে কেমন মনে হোল?”
—“কাকে?”
—“ঐ দাড়কে।”
শরৎবাবু ভাবিতে সময় না লইয়াই সুচিন্তিত অভিমত দিলেন—“আস্ত একটি শয়তান।”
আমি সংশোধন করিয়া বলিলাম—“না, মহর্ষি ব্যক্তি।”
পরে কিন্তু ক্যাম্পে ইনি এই নামেই পরিচিত হইয়াছিলেন। জাতে ব্রাহ্ম, তদুপরি একগাল দাড়ি, তাই আমরা বলিতাম— মহর্ষি জগদীশচন্দ্র (কর)। স্বভাবটিও প্রায় ঋষিতুল্য ছিল। পূর্বে শিয়ালদহ পুলিশের ডেপুটি সুপার ছিলেন, বক্সাতে সাহেবের অন্যতম এসিস্ট্যাণ্ট ও দক্ষিণ হস্তরূপে তিনি আগমন করেন। ক্যাম্পে ঢুকিলে তিনি আকণ্ঠ আহার না করিয়া কোনদিন বাহির হইতেন না। খাদ্যে তাঁর আসক্তিটা নির্বিকারই ছিল, কোনদিনই তা বিকারপ্রাপ্ত বা হ্রাসপ্রাপ্ত হয় নাই। আর বৃদ্ধির কথা তো উঠেই না, কারণ আসক্তিটা তিনি তুঙ্গেই উঠাইয়া লইয়াছিলেন, উন্নতির আর অবকাশ ছিল না। ভালো মাছ, ফল, তরিতরকারী আসিলে মহর্ষি তাঁর বালক পুত্রদের পাঠাইতেন, তাহারা আমাদের ম্যানেজারের হাতে কখনও একটুকুরা চিঠি দিত, অথবা কানে কানে বক্তব্য পেশ করিত। যাইবার সময় মাছের মুড়া, পাঁঠার ঠ্যাং, ফলমূল তরিতরকারী লইয়া হৃষ্টচিত্তে কোয়ার্টারে প্রত্যাবর্তন করিত। শুধু কি কেবল খাদ্যদ্রব্য? তেল, সাবান, জামা, কাপড় অর্থাৎ সংসারী মানুষের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় কোন বস্তুতেই মহর্ষির অনাসক্তি ছিল না। ঐ একই পদ্ধতিতে তাহা তিনি সংগ্রহের চেষ্টা করিতেন।
বারান্দায় অনেকগুলি পায়ের শব্দ শোনা গেল। চোখ তুলিয়া চাহিয়া দেখিলাম যে, মহর্ষি, আমাদের গার্ডিয়ান নিস্পেট্টর কয়টি, বেয়ারা ইত্যাদিতে
৬৯