দেখা তাঁর আরও একটু বাকী ছিল। ভূপতিদা তখনও দাঁড়াইয়া আছেন, তবু আর্দালী ডাকিয়া আর একখানি ‘কুরসী’ আনিবার কথা পর্যন্ত তিনি বলিলেন না। তখন ভূপতি মজুমদার সাহেবের টেবিলের উপর চড়িয়া বসিলেন এবং বাম পায়ের উপর দক্ষিণ পদ তুলিয়া হাফ-পদ্মাসন করিয়া আসনে উপবিষ্ট হইলেন।
মিনিটখানেকের মধ্যে এইটুকু ঘটিয়া গেল। সাহেব এতটার জন্য নিশ্চয় প্রস্তুত ছিলেন না। লালমুখ আরও লাল হইল, চোখ হইতে রোষাগ্নি নির্গত হইল, নাসারন্ধ্র বুলডগের মত স্ফীত হইল এবং মুখ হইতে পাইপটা ডান হাতে স্থান লাভ করিল।
অতঃপর সাহেব আওয়াজ ছাড়িলেন, “টেবিলে বসলে যে?”
পদ্মাসনে আসীন ব্যক্তি উত্তর দিলেন, “কারণ ঘরে বসবার মত আর চেয়ার নেই।”
—“তাই বলে তুমি টেবিলে উঠে বসবে?”
উত্তর হইল, “তবে কি তোমাকে খুশী করবার জন্য ঘোড়ার মত খাড়া দাঁড়িয়ে থাকব?”
সাহেবের ধৈর্য এতক্ষণে চ্যুত হইল। দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ করিয়া চাপাকণ্ঠে গর্জন করিলেন,—“জান, আমি ফোর্টের কমাণ্ডাণ্ট?”
সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর হইল—“Oh. you are the little Czar of this Buxa Fort?” যেন সংবাদ শুনিয়া ভূপতিদা আহ্লাদে আটখানা হইয়া গিয়াছেন, এমনি গদগদ কণ্ঠ।
উত্তর শুনিয়া সাহেব প্রায় ক্যাবলার মত হইয়া গেলেন। তাঁকে সামলাইয়া লইবার সুযোগ না দিয়াই ভূপতিদা কহিলেন—“লুক হিয়ার, শোন,তোমার সঙ্গে সময় নষ্ট করবার মত মেজাজ বা অবস্থা কোনটাই আপাততঃ আমাদের নেই। আমাদের এখন ভেতরে পাঠিয়ে দেও। আমরা অতিশয় শ্রান্ত, আমাদের বিশ্রাম দরকার। তোমার আইনকানুনের হাঙ্গামাগুলো তুমি পরে কর, ইচ্ছে হলে আমাদের সঙ্গে পরে বোঝাপড়াও তুমি করতে পার। কিন্তু এখন ভালো মানুষের মত আমাদের ভিতরে পাঠাবার কষ্টটুকু তুমি স্বীকার কর।”
৭৩