পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পৃথিবীতে প্রত্যেকেই নিজেকে ‘আমি’ বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকে। আসলে কিন্তু প্রত্যেক ব্যাটাই এক একটি নকল আমি। সৃষ্টিতে আসল ‘আমি’ হইলাম একমাত্র আমি। আমি তোমাদের ব্যাকরণের উত্তম পুরুষ নই, আমি একেবারে পুরুষোত্তম।”

 গীতা ছাড়িয়া উপনিষদে আসুন, দেখিতে পাইবেন যে, ঋষিরা গীতার বক্তাকেও প্রায় ছাড়াইয়া গিয়াছেন। কোন চক্ষুলজ্জারই ধার না ধারিয়া ঘোষণা করিয়া বসিয়াছেন—শৃণ্বন্তু অহং ব্রহ্মাস্মি। অর্থাৎ ‘আমি ঈশ্বর’ বলিয়া ‘আমিকে’ একেবাবে তুঙ্গে বা তুরীয়ে তুলিয়া নিশ্চিন্ত হইয়াছেন।

 এখন ঈশ্বরের ব্যবহারের খবর লওয়া যাক। তিনি ঘোষণা করিয়াছেন,— “এই সৃষ্টি আমার, আমিই ইহাকে ধরিয়া রাখিয়াছি এবং আমিই ইহাকে বিনাশ করি।” অর্থাৎ সৃষ্টি করিয়া তাঁর অহঙ্কার তৃপ্ত হইয়াছে, তাই তিনি সৃষ্টির দিকে ইঙ্গিত করিয়া আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইতেছেন—“আমি ঈশ্বর, আমার ঐশ্বর্য দেখ।”

 দেখা গেল, এই আমির আত্মশ্লাঘা হইতে কেহই বেহাই পান নাই। খোঁজ লইলেই জানিতে পারিবেন যে, আমাদের মধ্যে যিনি যত বড়, তিনি তত বড় আমি। জগৎটাই তো এই আমির আত্ম-প্রচারের একটি প্রকাণ্ড কীর্তনশালা ও আসর। এই আসরে মহাজন যেন গত সঃ পন্থা বলিয়া আমরাও যদি গলা খুলিয়া আমাদের কথা খানিকটা বলিয়া যাই, তাহাতে মহাভারত নিশ্চয় অশুদ্ধ হইতে পারে না।

 আমার নিজের কথা একটি স্থানে বলার আবশ্যক হইবে বলিয়াই এত বড় একটা ভূমিকা ফাঁদিরা লইয়াছি।—

 কমাণ্ডাণ্ট ফিনী সাহেবকে কিছুদিনের মধ্যেই স্ব-স্থানে প্রতিষ্ঠিত করিয়া আমরা একরূপ চলনসই করিয়া লইতে পারিয়াছিলাম। কিন্তু নিজেদের চলনসই করিয়া লইতে বেশ খানিকটা সময় আমাদের লাগিয়াছিল।

 অবস্থা স্বাভাবিক হইবার অন্তরায় ছিল সেই চিরন্তন কারণ, অর্থাৎ

৭৫