দলাদলি। বক্সার বিপ্লবীদের মোটামুটি তিনটি দলে বিভক্ত করা যাইতে পারে—যুগান্তর, অনুশীলন, আর বাদবাকী। এই বাদবাকী বা তৃতীয় দলের অধিকাংশই মূলতঃ পূর্বোক্ত দুইটি দলেরই লোক ছিলেন, কিন্তু ধরা পড়িবার বছরখানেক পূর্বে মতবিরোধ হেতু যুগান্তর ও অনুশীলন ঘাঁটি হইতে তাঁহারা স্বতন্ত্র হইয়া আসেন। বক্সাক্যাম্পে এই দলটিকে বলা হইত থার্ড পার্টি। ক্যাম্পের পরিচালনার জন্য বন্দীদের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা কি হইবে, ইহাই ছিল সমস্যা। ক্যাম্পের কর্তৃত্ব কোন পক্ষের হাতে থাকিবে, এই ভাবেও ব্যাপারটাকে দেখা চলে। যুগান্তর ও অনুশীলনের কলহ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায় বনেদী বলিলেই চলে। দুইয়ের গোপন দড়ি টানাটানিতে ক্যাম্পের ম্যানেজারের দায়িত্ব তৃতীয় পক্ষের জন চারেকের উপর গিয়া সাময়িকভাবে ন্যস্ত হয়। তখন পর্যন্ত একত্রই খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আমাদের ভাষায়—তখন পর্যন্ত একটি ‘চৌকা’ বা ‘কিচেন’ ছিল। বড় দুই পক্ষের এই ব্যবস্থা মনঃপুত ছিল না, আর তৃতীয় পক্ষ মাঝে থাকিয়া মজা দেখিতেছিল। এই সময়ে সেই ব্যাকরণের উত্তম পুরুষ আমি বক্সাতে আবির্ভূত হই।
নেতাদের প্রায় সকলকেই আমি চিনিতাম। বন্ধুদের নিকট ব্যাপারটা শুনিয়া লইলাম। তিনপক্ষের কর্তাদের মধ্যে জোর শলা পরামর্শ চলিতে লাগিল। আমি বন্ধুদের পরামর্শ দিলাম হাঁড়ি ভাগ করিয়া ফেল। পরামর্শটি অবশেষে তাঁহারাও সমীচীন বোধ করিলেন। ফলে, ক্যাম্পে সঙ্কট দেখা দিল এবং গোপন দলাদলির ঠেলায় রান্নাঘরে একদিন উনুন জ্বলিল না। বন্দীরা উপবাসেই রহিলেন। টিফিনের যে রুটি, মাখন, ডিম ইত্যাদি ছিল, তাহা লুঠ হইয়া গেল। এই অবস্থায় ক্যাম্পের প্রথম সাধারণ সভা আহুত হইল।
যাহা জুটিল খাইয়া লইয়া দিবানিদ্রা দিলাম। যখন জাগিলাম, তখন ঘরশূন্য। বুঝিলাম, সকলে সভায় গিয়াছেন। এমন উত্তেজনা-পূর্ণ সভাটির প্রথম হইতেই যোগ দিতে পারিলাম না ভাবিয়া একটা লোকসান বা ক্ষতির ব্যথাই মনে মনে বোধ করিলাম।
৭৬